বিভিন্ন উৎসবের সাজ | Dress up for various festivals in Bangladesh
বৈশাখী সাজ
"এসো হে বৈশাখ এসো এসো। তাপস নিঃশ্বাস বায়ে মুর্মুর সুরে দাও উড়ায়ে। বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যায় যাক, এসো এসো" নতুন বছরের আগমনে নতুন বছরকে বরণ করবো নতুন সাজে। নাচবো, গাইবো
সাজবো, সাজাবো আনন্দ উল্লাসে ভরাবো হৃদয়। আর যার মাটির সানকিতে ইলিশ পান্তা, শুটকি ভর্তা আর কাঁচা মরিচ পেঁয়াজ। এই পান্তা ইলিশের কথা ভাবতেই জিভে আসে পানি। সেই প্রতিক্ষায় আমরা বাঙ্গালীরা একটি বছর অপেক্ষা করি। ১ বৈশাখের সেই আনন্দঘন দিনটি আর কত দেরি না আর দেরী নয়। বৈশাখের আয়োজনে তাই শুরু হয়েছে সাজ সাজ রব। কে কেমন সাজবো কিভাবে সাজবো সেই ভাবনাগুলো নিয়ে আমার আজকের এই আয়োজন "বৈশাখী সাজ বৈশাখী সাজের মধ্যে আমরা পোশাকে আশাকে এ পর্যন্ত যে সব সেৱন্ধের ব্যবহার লক্ষ্য করে এসেছি তা হলো লাল ও সাদা। সাধারণত বৈশাখী সাজে মেয়েরা পড়ে লাল পাড়ের গরদ শাড়ী। আজ কাল লাল পাড়ের। সাদা সুতী শাড়ীতে নানা রকমের ব্লক এবং কারুকাজ দেখা যায়। সেই সাথে লাল সাদা রিনিক ঝিনিক কাঁচের চুড়ি, কাজলে আকা মায়াবী দু'চোখ। লাল কুমকুমের টিপ, লাল টুকটুকে লিপষ্টিক। ঝাড়ো হাওয়ায় স্কুলে দেওয়া বনলতার মত চুল অথবা খোঁপাতে গোঁজা ফুল। আজকাল বৈশাখী শাড়ীর বাহারে লাল সাদার বাইরেও দেখা যায় নানা রঙের ব্যবহার। নতুন বছরকে যেন নানা রঙে রঙিন করবার একটা চমক লাগানোর প্রয়াস।
বৈশাখী সাজে ছেলেরা সাধারণত পরে থাকে সাদা পাঞ্জাবী চুড়িদার এবং হাল ফ্যাশনের গলায় ঝোলানো লাল সোনালী ওড়না। কেউবা পরে লাল অথবা খয়েরী রঙের পাঞ্জাবী চুড়িদার, পায়ে চামড়ার চপ্পল। ছেলেদের পাঞ্জাবীতেও এসেছে নানা ধরনের ব্লকের ব্যবহার এবং কারুকাজ। আজকাল জিন্সের সাথে ফতুয়াও পড়ছে অনেকে তারপর খুব ভোরে সাজুগুজ করে সবাই মিলে যায় রমনার বটমূলে। বৈশাখের যত আনন্দ আয়োজন নানা রঙের মানুষের মিলন মেলা সেতো রমনার বটমূল।
আসুন তবে জেনে নেই লাখো কোটি বাঙ্গালীর সাথে আমরা কেমন সাজে, কে কেমনভাবে কাটাবেন বৈশাখের এই নতুন দিনটি।
বৈশাখে সবারই টার্গেট থাকে ভোরে রমনা বটমূলে যাওয়া। তাই সেদিকে খেয়াল রেখে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। যেমন কোন পোশাক পরা হবে তা আগে থেকেই আয়রন করে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখা উচিত। যাতে করে সকালে তাড়াহুড়া করে জামাকাপড় খুঁজে সময় নষ্ট করতে না হয়। মেয়েরা শাড়ীর সাথে কোন গয়না বা চুড়ি পরবে আগেই ম্যাচিং করে গুছিয়ে রাখা দরকার। যেহেতু ভোরে উঠতে হবে সে জন্য আগের রাতের পর্যাপ্ত ঘুম খুবই প্রয়োজনীয় তা নইলে ঘুম কম হলে চোখের নিচে কালি দেখা যাবে। চেহারায় ফুটে উঠবে ক্লান্তির ছাপ। বৈশাখের এই বিশেষ দিনে যা মোটেও কাম্য নয়। তাই গোছগাছ আগে থেকে সেরে রাত ১০টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়া উচিত
কিভাবে সাজবেন? গরমের দিনে হলে সাজটাও সাবধানে করতে হবে। ফাউন্ডেশন মুখে লাগালে গরমের তাপে তা গলে যাবার সম্ভাবনা থাকে। আর যেহেতু দিনের সাজ তাই সাজটা একটু হালকা হওয়াই বাঞ্ছনীয়। প্রথমে মুখ হাত পরিষ্কার করে ফেইস ওয়াস দিয়ে ধুয়ে টাওয়েল বা নরম কাপড় দিয়ে আলতো করে চেপে চেপে পানি মুছে নেবেন। এবার আপনার পছন্দের ময়েশ্চারাইজার দিয়ে ধীরে ধীরে মোলায়েম হাতে সারা মুখে গলায় হাতে মেখে নিন। এবার ভাল কোন ফেইস পাউডার মুখে সুন্দর করে লাগান। গালের উঁচু দুই পাশে ব্লাশন লাগান সেটিও হালকা হতে হবে। এবার আপনার পছন্দ মত চোখে হালকা আইস্যাডো লাগান। এরপর কাজল বা আইলাইনার লাগাতে পারেন। কপালের টিপটা শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে লাগাতে পারেন
কিংবা কুমকুম দিয়ে আপনার মত করে আঁকতে পারেন। যদি বাইরে সারাদিনের প্রোগ্রাম থাকে তবে হাতব্যাগে পাউডার, ছোট আয়না, চিরুনী এবং লিপস্টিক নিতে ভুলবেন না। রোদে ঘেমে গেলে টিস্যু দিয়ে হালকা করে চেপে ঘাম মুছে একটু ফাঁকে চট করে মুখে ফেইস পাউডার বুলিয়ে নিতে পারেন। ইলিশ পান্তা খেয়ে লিপস্টিক নষ্ট হবার সম্ভাবনা খুব বেশী। তাই বৈশাখের সাজে গ্লোসি লিপস্টিক ব্যবহার না করাই ভাল। ম্যাট অথবা সেমি ম্যাট লিপস্টিক লাগাবেন। আর সেটাও যদি একটু মুছে যায় পান্তা লেগে, তবে আপনার ব্যাগে লিপস্টিকতো আছেই। সুতরাং নো চিন্তা ডু ফুর্তি।
ছেলেদের সাজের কথা আর বিশেষ কি বলবো। মুখ পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে খুব হালকা করে পাউডারের পাফ বুলিয়ে নিতে পারেন। এর বেশী কিছু নয়।
ভোরে উঠে যারা গোসল করতে পারবেন না তারা অবশ্যই আগের দিন চুলটাকে ভালভাবে শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার লাগাবেন। তারপর সকালে যে যার পছন্দ মত হেয়ারস্টাইল করে বেরিয়ে পড়বেন ফুরফুরে মন নিয়ে। তবে মনে রাখতে হবে বৈশাখের সাজ বিশেষ করে সঠিক ম্যাচিং হওয়া চাই। বাহারি রঙের সাজও মন্দ লাগবে না। চলুন তবে নতুন সাজে নতুন বছরকে বরণ করে নিই। মেতে রই গানে , গল্পে আর কবিতায়।
ঈদের সাজু গুজু
রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ...... সবার মনেই কিন্তু
রোজার শুরুতে কেমন একটা ঈদের ফুর্তি ভরা আমেজ কাজ করে। ঈদে কে কোথায় বেড়াবে কেমন পোশাক পরবে, কেমন করে সেজেগুজে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবে- এই চিন্তার অন্ত নেই। মনে পড়ে ছোট বেলায় নতুন কাপড় কেনা হলে লুকিয়ে রাখতাম সযতনে। যেন কোন পড়শী দেখতে না পায়। তখন সেই ছোট্টমনে এমন একটা ধারণা ছিল যে ঈদের আগে কেউ নতুন কাপড় দেখে ফেললে তা পুরনো হয়ে যায়। কিংবা সুন্দর পোশাকটা কেউ দেখে যদি নকল করে ফেলে এইসব ভয় আর কি। এখনও কিন্তু বড় হয়ে সেই বোধটা মনের মধ্যে একটু একটু কাজ করে সবার। ইচ্ছেটা এমন যে, আমার পোশাক এবং ঈদের সাজটা হবে অসাধারণ, সবার থেকে আলাদা। যাকে বলে তাক লাগানো। ঈদে সেই তাক লাগানো সাজ কেমন করে সাজতে হবে তার কিছু গবেষণা, আলাপ আলোচনা এবং কিছু টিপস্ নিয়ে আমাদের এবারের এই আয়োজন- ঈদের সাজ।
ঈদের কেনা কাটা
ঈদের সাজ সাজতে গেলে প্রথমেই আসে ঈদের কেনা- কাটা প্রসঙ্গ। তাই প্রথমেই আসা যাক কেনাকাটা প্রসঙ্গে। ঈদের কেনাকাটা শুরু হয় সাধারণত রোজার শুরুতেই। যারা বুদ্ধিমান তারা অবশ্যই ঈদের কেনাকাটার পর্বটি
আগেভাগেই সেরে নেবেন। কারণ রোজার শেষের দিকে ভীড়ের চাপে মানুষের নাজেহাল অবস্থা। অনেক পছন্দের জিনিসটি যাচাই বাছাই করার সুযোগটিও থাকে না। বা সুযোগ থাকে না দর কষাকষির। যারা দর কষাকষি এড়াতে চান তারা অবশ্যই ফিক্সড প্রাইজ লেখা দোকানে যাবেন। সবচেয়ে ভাল কোন এক্সক্লুসিভ পোশাক কিনতে হলে আপনাকে বড় কোন দোকানে যেতে হবে। যদিও বড় দোকানে দাম একটু বেশি পড়বে তবুও আপনার কাঙিখত সলিত জিনিসটি পাবেন আশা করা যায়।
যারা বাজেট করে কেনাকাটা করতে চান, তারা অপেক্ষাকৃত সস্তায় পাওয়া যায় এমন কোন দোকানে যেতে পারেন । একটা প্রচলিত প্রবাদ আছে- আপ পছন্দ খানা পর পছন্দ পরনা। কিন্তু যে পোশাকটি পরবো তা অবশ্যই পছন্দের হতে হবে। যদিও অন্যের পছন্দের মূল্য আমাদের অনেক সময় দিতে হয়। সে যাই হোক স্বামী যদি স্ত্রীকে, প্রেমিক যদি প্রেমিকাকে, ছেলে মাকে, বউ শাশুড়ীকে পছন্দ করে ঈদে কোন শাড়ি বা পোশাক কিনে দেন, যদি সেটা পছন্দনীয় নাও হয় তথাপি মুখ ফুটে অপছন্দের কথাটা বলা অনেক সময় সঠিক নাও হতে পারে, এতে করে মনমালিন্যের সৃষ্টি হতেপারে।
তাই একটি ছোট্ট পরামর্শ হলো যা- ঈদের পোশাক কিনে দেবেন, হয় তাকে সঙ্গে নিয়ে কিনবেন, নয়তো তার পছন্দের ধরণ বা প্রয়োজনটুকু জেনে নিয়ে কিনুন। ঈদের দিন একটি আনন্দের দিন সেই দিনের পোশাক সামগ্রী যদি মনোপুত না হয় তবে ঈদটাই মাটি। পোশাক কেনার আগে একটা কথা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, তা হলো আপনি যা কিনছেন তা শুধু পছন্দ হলেই হবে না। সেটা আপনাকে কতটুকু মানাবে যেমন- আপনার গায়ের রঙ, ওজন, উচ্চতা, সামাজিকতা এবং আপনার বয়সের সঙ্গে কতটুকু মানানসই সে দিকটা বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে দোকানের ট্রায়াল রুমে গিয়ে পরে দেখতে পারেন কিংবা দোকানের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আপনার পছন্দের পোশাকটি গায়ের উপর সাজিয়ে দেখে নিতে পারেন।
আমরা যখন মুরুব্বীদের জন্য শাড়ী বা পোশাক কিনতে যাই তখন মাথায় আসে সাদা, অফহোয়াইট কিংবা ম্যাটমেটে কোন রঙের ধারণা। আজ বিংশ শতাব্দীর যুগে বয়স্কদের জন্য এক রঙ আর যুবক যুবতীর জন্য অন্য রঙ এ কনসেপ্ট পুরোপুরি পাল্টে গেছে। আজ ছেলে যুবা সবারই মন শতেক রঙে রঙিন। বয়স্করা রঙিন কাপড় পরলে কিন্তু বেশ ভালই লাগে। মনে হয় তারা যেন তাদের যৌবনকে নতুন করে ফিরে পেয়েছেন। বিদেশে বুড়োবুড়িরা কিন্তু রঙিন জমকালো পোশাক পরে অভ্যস্ত। তাহলে আমাদের মা-বাবা, শশুর-শাশুড়ী, দাদা-দাদী, নানা-নানীরা কেনইবা রঙিন কাপড় পড়ে ঈদটাকে আরো রঙিন করে তুলবেন না?
পায়ের সাজে জুতা
ঈদের সাজসজ্জায় সবই তো হলে। কিন্তু স্যাণ্ডেলের কথা যেন ভুলবেন না। পোষাকের সাথে ম্যাচিং করে জুতো কেনা চাই।আর শুধু পছন্দসই হলেই চলবেনা জুতো যেন হয় আরামপ্রদ ।
স্যাণ্ডেল বা জুতা পায়ে দিয়ে হাঁটলেই যদি পায়ে ফোস্কা পড়ে যায় তবে এর চেয়ে যন্ত্রণাদায়ক আর কিছু নেই। তাই দোকানে গিয়ে তাড়াহুড়ো করে জুতা কিনবেন না যেন। ভাল করে দেখে শুনে এবং পায়ে দিয়ে দেখে নেবেন জুতা কমফোরটেবল কি না। জুতো যদি আরামপ্রদ না হয় তবে ঈদের ঘোরাঘুরি আর বেড়ানোটাই অস্বস্তিকর হয়ে উঠতে পারে। ছেলেরা জুতা কেনার সাথে নতুন মোজা কিনতে ভুলবেন না যেন। কারণ নতুন জুতোয় নতুন মোজাই মানান সই।
ঈদের কেনাকাটায় যেমন নতুন জুতা চাই, তেমনি নতুন অন্তর্বাস কিনতেও ভুলবেন না যেন। ঈদের সব নতুনের সাথে পুরাতন অন্তর্বাস না পরাই ভাল ।
অন্তর্বাস
ঈদে নতুন কাপড়ের সাথে পুরোন অন্তর্বাস না পড়াই ভাল। নিজের অন্তর্বাস নিজেই কিনুন, পোষাকের সাথে রঙ মিলিয়ে। মেয়েরা অন্তর্বাস কেনার সময় দোকানের ট্রায়ালরুমে অবশ্যই ট্রায়াল দিয়ে নেবেন। আর যেটি আরামপ্রদায়ক সেটিই কিনবেন
ঈদে অনেক মহিলাই পোশাকের সাথে ম্যাচিং করে গয়না কিনে থাকেন। গয়না বলতে আমরা সাধারণত সোনার গয়নাকেই বুঝি কিন্তু না। গয়না শুধু সোনার নয়, রূপা, পিতল, স্টিল, কাঁচ, পুঁতি, ঝিনুক, মোম, পাথর, সূতা এমনকি মাটি দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। যার যার সামর্থ বা পছন্দ অনুযায়ী আপনারা এই সব গয়না কিনতে পারেন। তবে সোনার গয়না বা দামী পোশাক কেনার আগে একটা অনুরোধ স্বামী বা প্রেমিকের পকেটের প্রতি একটু সদয় হলে ভাল হয়। তা না হলে দেখা যাবে স্ত্রী বা প্রেমিকার সোনার গয়না বা দামী পোশাক কিনতে যেয়ে বেচারার ঈদের আনন্দটুকু নিরানন্দে পর্যবসিত হয়েছে। মনে রাখতে হবে ঈদ মানে একার আনন্দ নয়, ঈদ মানে আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেয়া। লক্ষ রাখতে হবে এই আনন্দ থেকে কেউ যেন বঞ্চিত না হয়। এমনকি বাড়ির কাজের লোকের চোখে মুখেও যেন ঈদের খুশি উপচে পড়ে। সে বিষয়টা যেন আমরা ভুলে না যাই।
এবার আসি ঈদের রূপ চর্চা প্রসঙ্গে
ঈদের রূপচর্চা
রূপ চর্চার প্রথম শর্ত হলো শরীরটাকে ঠিক রাখা। এক কথায় ফিট রাখা। এই ঠিক বা ফিট রাখতে গেলে প্রথমেই আমাদের স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। অর্থাৎ সুস্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে।
রোজা অর্থ সিয়াম সাধনা বা রসনার বাসনাকে সংযমে রাখার একটা প্রক্রিয়া। রোজার মাসে আমরা সারাদিন রসনাকে সংযত রাখি ঠিকই, কিন্তু দেখা যায় ইফতারের পর এবং রাতের খাবারের আয়োজনে টেবিল ভর্তি। তখন স্বভাবতই আমরা সংযম হারিয়ে অতি আহার বা ভুড়ি ভোজ করে অসুস্থ হয়ে পড়ি। কেউবা রোজার শেষে সারা শরীরে মেদ এবং মাংসের আধিক্য ঘটিয়ে নিজের স্বাভাবিক সৌন্দর্য অনেকটাই হারিয়ে বসেন। তখন ঈদের পোশাকে বা সাজ সজ্জায় তাকে তার তেমন সুন্দর দেখায় না। মনে রাখবেন ওজন বাড়লে যেন বয়সও বেড়ে যায় বলে মনে হয়। উচ্চতা অনুযায়ী যদি • শরীরের সঠিক ওজনটাকে মেইনটেইন করা যায় তাহলে বয়সটা যেন একই
জায়গায় থেমে থাকে অনেকদিন। আর ঈদের সাজ সজ্জায় শরীরের ওজনটাকে সঠিক রাখার চেষ্টা করাটা খুবই জরুরি। এরজন্য প্রয়োজন প্রথম থেকেই মানসিক প্রস্তুতি, ভাজা পোড়া কম খাওয়া, অতি আহার বর্জন করা, রাতে ঘুমোতে যাবার আগে হালকা কিছু ব্যায়াম করা।
ত্বক চর্চা
এবার আসি ত্বক পরিচর্যা প্রসঙ্গে। আপনার রঙ যেমনই হোক না কেন মসৃণ সতেজ ত্বকের অধিকারী যদি আপনি হন, আপনার কালো বরণ ত্বকেও যদি জেন্না দেখা যায় তা নিশ্চয়ই কারো না কারো হৃদয় হরণ করবেই। ত্বক পরিচর্যায় প্রথম শর্ত হলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। ত্বক পরিচর্যার জন্য বাজারে নানা ধরনের কেমিক্যাল ও হারবাল প্রোডাক্ট বা সামগ্রী পাওয়া যায়। কিম্বা আপনি নিজেও ঘরে তৈরি প্রাকৃতিক ভেষজ সামগ্রী দিয়েও ত্বক পরিচর্যা
করতে পারেন। শরীরের সমস্ত কোনায় কোনায় ভাঁজে ভাঁজে ময়লা জমে থাকে, যা অনেক সময় আমরা লক্ষই করি না। সেই সব জায়গা পরিচর্যার প্রতি যত্নশীল হতে হবে। বিশেষ করে ঘাড়ে, কানের ভিতরে, কানের চারপাশে, নাভীতে, কুচকিতে, পিঠে, নিতম্বে, বোগলে, পায়ের গোড়ালি ও আঙ্গুলের ফাঁকেও নখের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি সচেতন হতে হবে। শরীরের এই সব অংশে যত্নের অভাবে ময়লা জমতে জমতে এক সময় কালো ছোপ ও খসখসে ভাব জন্ম নেয়। এমন কি দুর্গন্ধেরও উদ্রেক পারে। এই সব বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি।
গোসলের পর সারা শরীরে এবং হাতে পায়ে ময়েশ্চারাইজিং লোশন মেখে নেবেন এতে করে সারাদিন আপনার ত্বক মসৃণ থাকবে সজীবতা উজ্জ্বল দেখাবে।
দাঁতের পরিচর্যা
ঈদের খাওয়া দাওয়া যাতে পরিতৃপ্তির সাথে করতে পারেন সেই জন্য বিশেষ পরামর্শ হলো যারা দাঁতের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন, আজ নয়তো কাল বা ঈদের বাজেট ফেল হবার ভয়ে দাঁতের চিকিৎসা এগিয়ে যাচ্ছেন, তারা অবশ্যই প্রয়োজনে ঈদের শপিং কম করে দাঁতের ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক এবং সুন্দর দাঁতের অধিকারী হবেন এবং তা অবশ্যই ঈদের আগে। মনে রাখবেন সুন্দর নাই হচ্ছে সুন্দর হাসির রহস্য।
দাঁতে রোগ সৃষ্টি হলে মুখে দুর্গন্ধেরও উদ্রেক হয়। ঈদের দিন যদি আপনার মুখে দুর্গন্ধ থাকে বা দাঁতের ব্যথায় কষ্ট পান তবে সেটি আপনার এবং আপনার প্রিয়জন বা অতিথিদের সমাজে বিড়ম্বনার বিষয় হতে পারে। দাঁত অমূল্য সম্পদ। এই অমূল্য সম্পদ থাকতে যদি কেউ দাঁতের মর্যাদা না বোঝেন তবে অকালেই দাঁত হারিয়ে সৌন্দর্য তো বটেই আরাম করে ঈদের খাওয়ার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হতে পারেন সন্দেহ নেই। তাই আর দেরী নয় এক্ষুণি ডেন্টিস্টের শরণাপন্ন হন।
ঘুম
ঈদের আগের রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন, তা হলে রাত জাগার কারণে চোখের নিচে কালি পড়তে পারে। এমনকি চোখ ভিতরে বসে যেতে পারে। অথবা, সারা চেহারায় বিষণ্ন ক্লান্তির ছাপ পড়তে পারে। দেহ মন ও চেহারা ঝরঝরে সজীব রাখতে অবশ্যই ঈদের আগের রাতে কম করে হলেও ৫ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। সারারাত জেগে রান্না বান্না বা ঘর গোছানোর কোনই প্রয়োজন নেই। ঈদের আগে সব কাজই সুপরিকল্পিতভাবে গুছিয়ে সময় মত করতে হবে। যাতে করে ঈদের আগের দিন কোন প্রকার টেনশন মা থাকে। শরীর এবং মনে কোন প্রকার ট্রেস দেয়া চলবে না।
সকাল এবং বিকেলের সাজ
সকালে মুখের মেকআপ যেন কটকটে না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। বিকেল বা সন্ধ্যার সাজ একটু গাঢ় হলেই ভাল। অনেকে সকালের সাজের উপরই বিকেলে পাঙ্ক ফুলিয়ে নেন। এটা কিন্তু ঠিক নয়। সারাদিন।
মেকআপের উপর ধূলো ময়লা জমে। তাই বিকেলে উচিৎ যে কোন ফেইস ওয়াস দিয়ে মুখটা পরিষ্কার করে ধুয়ে নতুন করে মেকআপ করা। তাহলে সেই মেকআপটা প্রাঞ্জল মনে হবে।
এই সাজ বা রূপ চর্চা শুধু মেয়েদের জন্য তা কিন্তু নয়। ছেলেরাও একইভাবে তাদের নিজের শরীর ত্বক, দাঁত, চুল, হাত, পা এবং মুখশ্রীর যত্ন নেবেন । আজকাল ছেলেদের জন্যও বিউটি পার্লার চালু হয়েছে।
ছেলেরা ছেলেদের মত করে পরিপাটি হয়ে সাজুন। যাতে আপনি আপনার স্ত্রী, প্রেমিকা বা বান্ধবীর কাছে আকর্ষণীয় হতে পারেন এবং নিজের ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলতে পারেন পৌরষদীপ্ত করে। প্রয়োজনে ছেলেরা ঈদের আগে পার্লারে গিয়ে সুন্দর স্মার্ট হয়ে আসুন।
পোশাকের সাথে গয়নার ম্যাচিং
ঈদের দিন ভারী পোশাক বা শাড়ির সাথে পরবেন হালকা গয়না। আর হালকা পোশাক বা শাড়ির সাথে পরতে পারেন ভারী গয়না। দেখতে বেশ লাগবে। মেয়েদের পোশাক যে ধরনেরই হোক না কেন, সব ধরনের পোশাকেই হাত ভর্তি রিনিক ঝিনিক চুড়ির আওয়াজ আর পায়ে রুমঝুম ঝুম নূপুর ধ্বনি শুনতে এবং দেখতে কিন্তু বেশ লাগে। আপনি যেমন শাড়ি বা সেলোয়ার কামিজের সাথে পায়ে নূপুর, হাতভর্তি চুড়ি পরতে পারেন। তেমনটিই জিন্স, টপ্স ফতুয়া বা টি শার্টের সাথেও পায়ে নূপুর আর হাতে চুড়ি পরলে কিন্তু বেশ লাগবে। যেসব মেয়েরা ঈদে জিন্স উপস্ ফতুয়া বা টি শার্ট পরতে চান তারা ইচ্ছে করলে ওড়নাসহ বা স্কাফসহ পড়তে পারেন। দেখতে মন্দ লাগবে না। ফ্যাশনের কোন ধরাবাধা নিয়ম নেই। তাই আপনার ফ্যাশন আপনিই তৈরি করুন।
মুখের মেকআপ
মুখের মেকআপ নেবার আগে মুখটাকে যে কোন হার্বস বা ফেইস ওয়াস দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নেবেন। তারপর নরম টাওয়েল দিয়ে হালকা হাতে চেপে চেপে পানিটাকে মুছে নেবেন। মনে রাখবেন
মুখের নাজুক ত্বক কখনোই টাওয়াল দিয়ে জোরে ঘসে মোছা উচিত নয়। এতে করে মুখের চামড়া কুঁচকে যেতে পারে, খসখসে হতে পারে কিংবা ঝুলেও যেতে পারে। এইবার যে কোন ময়েশ্চারাইজার (যা আপনাকে স্যুট করে) দিয়ে মুখটাকে কোমল হাতে মেসাজ করে নেবেন। আপনার মুখে যদি কোন দাগ থেকে থাকে তা কাভার করার জন্য এক প্রকার বেইজ মেকআপ বা ফাউন্ডেশন পাওয়া যায় সেটা দিয়ে চোখের কালো অংশ বা যেখানে দাগ আছে এমনকি সারা মুখে সেটা লাগিয়ে নিতে হবে ফিঙ্গার টিপস্ দিয়ে। এইবার কোন ভাল ব্রান্ডের ফেইস পাউডার আলতো করে সারা মুখে, গলায়, ঘাড়ে মিশিয়ে লাগাতে হবে ।
এইবার মুখে একটু হালকাভাবে পানি স্প্রে করে স্পঞ্জ দিয়ে চেপে চেপে মেকআপটাকে বসিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে আর একবার পাখা বুলিয়ে নিন। এবার ব্লাসার দিয়ে হালকা পিংক ব্লাসন নাকের দু'পাশে দুই গালের উঁচু হাড়ে এবং দুই চোয়ালের কোণায় লাগাবেন। ব্লাসন যেন কখনোই বেশি লাল না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মেকআপ যেন স্বাভাবিক লাগে। এবার আসি আইভ্রুতে। ভ্রু আঁকবেন এমনভাবে যা আপনার চেহারার সঙ্গে মানিয়ে যায় এমন আকৃতিতে। কখনই আইব্রুতে ডিপ পেন্সিল ব্যবহার করবেন না। ব্রাউন বা অ্যাশ কালারের আই ব্রু পেন্সিল দিয়ে ভ্রু আকলে স্বাভাবিক সুন্দর লাগবে। কিম্বা ব্রাউন ব্ল্যাক কম্বিনেশন করে ও আঁকতে পারেন।
চোখের সাজ
চোখ যে মনের কথা বলে...। ঈদের সাজে চোখ সাজবার গুরুত্ব অপরিসীম। কেমন করে যত্ন নেবেন চোখের তারই কিছু টিপস্ :
১. ঈদের সাজে আপনি শাড়ি ড্রেস বা আপনার চুলের রঙের সাথে ম্যাচিং করে কনটাক্ট ল্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার লুক অসাধারণ মনে হবে। সেই সাথে যদি চোখের পাতায় লাগিয়ে নেন এক্সট্রা আইল্যাশ তবে তো কথাই নেই। প্রথমত যাদের চোখ ছোট বা একটু দাবানো তারা চোখটাকে আকর্ষণীয় করার জন্য একটু গাঢ় করে আইশ্যাডো লাগাবেন। ছোট চোখে পেছনের কোণা দুটো একটু টেনে উপরে এবং নিচে ভরাট করে চোখের উপর নিচে দুই দিকে কাজল, আইজ বা যে কোন শেড পেন্সিল দিয়ে আঁকবেন।
৩. যাদের চোখ একটু বেশি বড় বা বাইরে ফোলা ফোলা, তারা অবশ্যই চোখের বাইরে দিয়ে উপর নিচে কাজল দেয়া থেকে বিরত থাকবেন। বড় চোখের অধিকারিণীরা আই শ্যাডো লাগাবেন হালকা রঙের এবং চোখের ভেতর দিয়ে কাজল পরবেন। এতে করে চোখ দুটো বাঘা বাঘা মনে না হয়ে মাধুর্যমন্ডিত মনে হবে।
৪. স্বাভাবিক আকারের চোখের অধিকারিনীরা যেমন খুশি নিজের পছন্দ মত চোখ আঁকতে পারেন ৷ চোখ সুন্দর করে আঁকতে পারাটাও একটা আর্ট। সেই আর্টে যদি আপনি পারদর্শী না হন তবে বিউটি পার্লার বা যিনি সুন্দর করে চোখ আঁকতে পারেন তার সাহায্য নিতে পারেন।
ভালবাসা দিবসের সাজ
ভালবাসা দিবসে ভালবাসার রঙে রঙিন হতে কে না চায়। তাই ভালবাসা দিবসে পড়ুন উজ্জ্বল রঙের পোষাক, সাজুন আপনার ভালবাসার মানুষের পছন্দ অনুযায়ী সাজে। চুল সাজাতে পারেন পছন্দের ফুলে। হাতে জড়িয়ে রাখতে পারেন বেলী, রজনীগন্ধ। অথবা বকুল ফুলের মালা খোঁপাতে গোলাপ, বেলী যে কোন ফুল। অন্য কোন কৃত্রিম সুগন্ধি ছাড়াও প্রকৃতির সুগন্ধে সুবাসিত হয়ে উঠুন। ভরিয়ে তুলুন নিজের ও প্রিয়জনের দেহ মন ফুলের সুবাসে। মোহিত করুন আপনার ভালবাসার মানুষকে।
ভালবাসা দিবসে ভালবাসা সবার জন্য। ছেলে বুড়ো নেই কোন ভেদাভেদ, প্রৌঢ়ত্বে এসেও আপনি ভালবাসা দিবসে যৌবনের সাজ পোষাকে সাজতে পারেন রঙিন হয়ে। রাঙিয়ে তুলতে পারেন আপনার এবং আপনার ভালবাসার মানুষের হৃদয়। তাতে কোন বাধা নেই।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন