নাক, কান,গলা ও স্নায়ুঘটিত রোগের কারণ,লক্ষণ ও আনুষঙ্গিক চিকিৎসা | Nose, Ear, Throat and Neurological Diseases causes, symptoms

কর্ণমল (Wax in Ear)
কারণ :-ধুলো বালি পরে কানে শক্ত জমাট বাঁধে এবং প্রদাহ হয় বা বধিরতা সৃষ্টি করে
লক্ষণ :-কান ভারি হয়ে থাকে। কানে কম শোনা যায়, কান ফরফর করে। অনেক সময় ক্ষতেরও সৃষ্টি করে।
চিকিৎসা :- Waxolve বা Soluwax প্রভৃতি Drop গুলি ব্যবহার করতে হবে। H,O, অর্থাৎ হাইড্রোজেন পার অক্সাইড দ্বারা কান পরিষ্কার করা চলে। বেশি অসুবিধা থাকলে ঈষদুষ্ণ গরম পানি Syriage-এ ভরে কান ওয়াশ করতে হয়।
আনুষঙ্গিক চিকিৎসা :-কানে সরিষার তেল ব্যবহার করা যায়। ধুলোমাটিতে কাজ করার সময় কানে তুলা রাখা ভালো
কর্ণপ্রদাহ (Otitis)
কারণ :-ঠান্ডা লাগা, পানি ঢোকা, রোগবীজাণুর আক্রমণ, কঠিন পালক দিয়ে খোঁচান, ফাঙ্গাসের ইনফেকশান প্রভৃতি থেকে বহিঃকর্ণ মধ্যকর্ণ এবং অন্তঃকর্ণ প্রসাহ হয়ে থাকে।
লক্ষণ :-কানে ব্যথা বা যন্ত্রণা, পুঁজ নির্গত হওয়া বা লাল তার ধারণ করা এবং কানে কম শোনা প্রভৃতি হয়। চুলকানী থাকলে ফাঙ্গাস ইনফেকশন বলে ধরা হয়।
আনুষঙ্গিক চিকিৎসা ঃ-কানে গরম সেঁক দেওয়া উপকারী। লাউ পাতার রস বা কচিকলাপাতার ভিতরের জমে থাকা পানি খুব উপকারী।
কর্ণব্রন (Furuncle of Meatus)
কারণ:-বীজ সংক্রামণের ফলের এই রোগ হয়।
লক্ষণ :-কানের ভিতর ছোট ছোট ব্রণ দেখা যায়। দপদপানি যন্ত্রণা,ব্রণফেটে পুঁজ রক্ত নির্গত হওয়া প্রভৃতি দেখা যায়।
তরুণ সর্দি (Common Cold)
কারণ :-ঠান্ডা লাগা, বৃষ্টিতে ভেজা এবং তার থেকে বীজাণুর আক্রমণ ঘটে তরুণ সর্দির সৃষ্টি হয়। আবার অ্যালার্জী থেকেও এই রোগের উৎপত্তি হয়।
লক্ষণ :-নাক চোখ দিয়ে পানি পড়া, গলায় জ্বালা, নাসিকায় প্রদাহ, গলায় টাটানি ব্যথা, মাথায় যন্ত্রণা, উষ্ণ শ্বাসপ্রশ্বাস হাঁচি, চক্ষুর লালাভ ভাব, অল্প কাশি ও জ্বর ভাব প্রভৃতি লক্ষ্য করা যায়।
আনুষঙ্গিক চিকিৎসা :-গরম পানীয়, সাগু, বার্লি, রুটি, মুড়ি, হরলিক্স প্রভৃতি খেতে দিতে হবে। ঠান্ডা লাগানো উচিত নয়।
সাইনাসের প্রদাহ (Sinusitis)
কারণ :-ঠান্ডা লাগানো, রোদ্রে কাজ করার পর ঠান্ডা পানি খাওয়া, নাকের ক্ষত গিয়ে সাইনাসকে আক্রমণ করে কল
লক্ষণ :-প্রচন্ড মাদার যন্ত্রনা কিছুতেই কমে না। খুব গাঢ় সর্দি রক্তপাত হবারও ভয় থাকে।
আনুষঙ্গিক চিকিৎসা:- গরম পানিতে Tr. Benzoin স্টেম শোঁকালে কিছুটা যন্ত্রণার উপশম হয়। ঠাণ্ডা না লাগানো উচিত।
শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহ (Pharyngitis)
কারণ :- সর্দির পুনঃ পুনঃ আক্রমণ, ঠাণ্ডা লাগা প্রভৃতি থেকে আক্রান্ত হয় এবং ইনফেকশন ঘটে । তার থেকেই প্রদাহ সৃষ্টি হয়।
লক্ষণ :-গলা সুড়সুড় করা, কাশি, গলায় টাটানি ব্যাথা, অল্প জ্বর, কফ উঠতে চায় না, শ্বাস কষ্ট হবার মত মনে হয়
আনুষঙ্গিক চিকিৎসা :-সব সময় গলায় মাফলার ব্যবহার করতে হবে। ঠান্ডা স্থানে বাস নিষিদ্ধ। ঝাল জাতীয় খাবার খাওয়া চলে না । মিছরির সরবৎ এবং তুলসীপাতার রস উপকারী।
স্বরযন্ত্র প্রদাহ (Laryngitis)
কারণ :-উচ্চস্বরে বক্তৃতা দান, বেশি ধূমপান, ঠান্ডা লাগানো প্রভৃতি থেকে ইহার উৎপত্তি। স্ট্যাফাইলোকক্কাস ও নিউমোকক্লাস জাতীয় বীজাণুর আক্রমণই ইহার প্রধান কারণ
লক্ষণ :-পলায় প্রচন্ড ব্যথা, কথা বলতে এবং খাবার খেতে কষ্ট, চটচটে শ্লেষ্মা জমে থাকা, গলায় খুসখুস করে কাশি হওয়া, গলায় সাইনাই আে পারে এবং শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি ইহার লক্ষণ।
আনুষঙ্গিক চিকিৎসা :-Strepsils লজেন্স চুষলে কিছু উপশম হয়। কথা কম বলার চেষ্টা করতে হবে। ধূমপান নিষিদ্ধ।
তালুমূলপ্রদাহ (Tonsilitis)
কারণ :-ঠান্ডা লেগে বা চাপ পড়ে তালুমূলে গ্রস্থিতে বীজাণু ইনফেকশন ঘটে এবং তা ফুলে উঠে প্রদাহের সৃষ্টি করে
লক্ষণ :-প্রচন্ড জ্বর, গলায় ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, খাবার গিলতে কষ্ট, স্বরভঙ্গ, টনসিলের বৃদ্ধি প্রভৃতি এর লক্ষণ।
আনুষঙ্গিক চিকিৎসা :-লবণ পানিতে কুলকুচি করা ভালো। গম পানিতে চায়ের পাতা দিয়ে গার্গল করা ভালো। ঠান্ডা লাগানো ভালো নয়। গরম সেঁক দেওয়া উপকারী। প্রোটিনজাতীয় তরল খাদ্য খেতে হবে।
স্নায়ুঘটিত পীড়ার কারণ,লক্ষণ ও আনুষঙ্গিক চিকিৎসা
আধকপালে (Migraine)
কারণ :-শরীরে Vitamin B. B এবং Bia এর অভাব, মাথায় লাগ সাইনাসের প্রদাহ প্রভৃতি থেকে এই রোগের সৃষ্টি হয়।
লক্ষণ :-মাথাধরা যে কোন একদিকে প্রচন্ড যন্ত্রণা হয়। যন্ত্রণা চলতে থাে সাথে মাথা ঘোরাও থাকতে পারে।
আনুষঙ্গিক চিকিৎসা:- রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে এবং নির্জন জায়গায় রাখতে হবে। ঘুম যাতে ভালো হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে।
মৃগী রোগ (Epilepsy)
কারণ :-বংশগতভাবেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই রোগের উৎপত্তি ঘটে। এছাড়া আঘাত লাগা, ভয় পাওয়া, মদ্যপান, মানসিক অবসন্নতা, সংক্রামক রোগে ভোগা প্রভৃতি কারণেও এই রোগ সৃষ্টি হতে পারে।
লক্ষণ :-মাথা ঘোরা, ঝাপসাদৃষ্টি, সর্বাঙ্গের ব্যথা ও কম্পন, কান ভোঁ ভোঁ করা, মাথা ঝিম ঝিম করা, ক্রন্দন, আঁতকে ওঠা, মুখে ফেনা ওঠা, শীতল চটচটে ঘাম, সম্পূর্ণরূপে চৈতন্যলোপ এই রোগের লক্ষণ।
আনুষঙ্গিক চিকিৎসা :-চামড়ার জুতার ঘ্রাণ লইলে শীর্ঘ চৈতন্যলাভ হয়। শীতল পানিতে স্নান, নিরামিষ ভোজন, লঘুপথ্য, নেশাসেবন, সাঁতার নিষিদ্ধ।
মস্তিষ্কের সমবরোধन (Cerebral Thrombosis)
কারণ: রক্তচাপ, হার্টের পেশির সংকোচন, পেটে বা অর্শের স্রাব বন্ধ হওয়া, অতিরিক্ত মদ্যপান প্রভৃতি থেকে শিরা ধমনীর মধ্যে রক্তচাপ প্রচন্ড বেড়ে গিয়ে জমাট বেঁধে যায় ফলে এই রোগের সৃষ্টি
লক্ষণ :-প্রচন্ড মাথার যন্ত্রণা, মূৰ্চ্ছা, মাথা ঘোরা, উচ্চ রক্তচাপ, নাক দিয়ে রক্তপাত হতে পারে, C. S. ফ্লুইড বৃদ্ধি পায়।
আনুষঙ্গিক চিকিৎসা :- রোগীকে হালকা খাদ্য খেতে দিতে হবে। আলো বাতাসপূর্ণ ঘরে এবং নিস্তব্ধ জায়গায় থাকা উপকারী।
পারকিনসনিজম্ (Parkinsonism)
কারণ :-এনকেফালাইটিস রোগের ভাইরাস, বিষাক্ত ঔষধ সেবন,সেরিব্রোভাসকুলার রোগ থেকে বেসাল গ্যাংলিয়া আক্রান্ত হয়ে এই রোগের সৃষ্টি হয়।
লক্ষণ :-হাত বা পায়ের কাঁপন, খালধরা, পেশার বা সন্ধির কর্মক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, পেশীর শিথিলতা প্রভৃতি সৃষ্টি হয়
আনুষঙ্গিক চিকিৎসা :- পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। ব্যায়াম ও ম্যাসেজ উপকারী। হরলিক্স, কমপ্লান, প্রোটিনেক্স প্রভৃতি খাওয়া চলবে।
বেলস পালসি (Bell's Palsy)
কারণ :-ঠান্ডা লাগা, কানে পানি ঢোকা প্রভৃতি থেকে Mastoid Gland বা Mastoid Canal-এ ইনফ্ল্যামেশন হয় এবং এই রোগ সৃষ্টি করে।
লক্ষণ :-চোখ ফোলা, যন্ত্রণা হওয়া, কানের যন্ত্রণা, চোয়াল গালফোলা, মুখ দিয়ে লালা ঝরা প্রভৃতি ।
আনুষঙ্গিক চিকিৎসা :-পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, হালকা ব্যায়াম, প্রাতঃভ্রমণ উপকারী। ভিটামিন B-Complex জাতীয় টনিক খাওয়া চলবে।
মস্তিষ্ক-আবরণ ঝিল্লীপ্রদাহ (Meningitis)
কারণ :-মেনিঙ্গোকক্কাস নামক একপ্রকার বীজাণুর আক্রমণ, মস্তকে আঘাত, অন্য উদ্ভেদ জ্বরে উদ্ভেদ বসে যাইলে এই রোগ উৎপন্ন করে
লক্ষণ :-প্রবল জ্বর, ভুলবকা, একদৃষ্টে চেয়ে থাকা, চমকে ওঠা, জিহ্বার কম্পন, আক্ষেপ, ঘাড় আড়ষ্ট হওয়া, সংজ্ঞালোপ পাওয়া, নিদ্রাবস্থায় চিৎকার করে ওঠা এই রোগের লক্ষণসমূহ।
আনুষঙ্গিক চিকিৎসা :-প্রয়োজনবোধে রোগীর মাথায় বরফ দিতে হবে। দুধ, কমপ্লান, হরলিক্স প্রভৃতি দেওয়া যাবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন