শ্বাসযন্ত্রের পীড়া কারণ,লক্ষণ ও আনুষঙ্গিক চিকিৎসা | Respiratory Distress Causes, Symptoms and Treatment
তরুণ ব্রঙ্কাইটিস (Acute Bronchitis)
কারণ :-
শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব, পুনঃ পুনঃ সর্দির আক্রমণ প্রভৃতি থেকে শ্বাসনালী এবং তার অন্যান্য যন্ত্রসমূহে স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোকক্কাস এবং স্ট্যাফাইলো কক্কাস জীবাণুর আক্রমণ ঘটে এবং এই রোগের সৃষ্টি হয়।
লক্ষণ :-
বুকে সর্দি জমা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, সাঁই সাঁই শব্দ ব্রহ্মাসের প্রদাহ, হলদে শ্লেষ্মাস্রাব তৎসহ সামান্য জ্বরভাব এই রোগের লক্ষণ ।
আনুষঙ্গিক চিকিৎসা :-
গরম চা বা কফি ব্যবহার করলে শ্লেষ্মানির্গমণে সাহায্য করে। গরম পোশাক ব্যবহার, ঈষদুষ্ণ গরম পানিতে গোসল বিধেয়। দুধ, ঘি, সিদ্ধ মুরগির ডিম, ছানা এবং প্রোটিন জাতীয় খাবার উপযোগী
পুরাতন ব্রঙ্কাইটিস্ (Chronic Bronchitis)
কারণ :-
তরুণ, শ্বাসনালীর প্রদাহ না নিরাময় হওয়া কিংবা পুনঃ আক্রমণ হতে হতে তা চিরস্থায়ী হইলেই Chronic Bronchitis এ পরিণত হয়।
লক্ষণ :-
বুকে ব্যথা, শ্লেষ্মা জমে থাকা, দিনের মধ্যে নানান সময়ে শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পাওয়া, প্রচন্ড কাশি, দুর্বলতা মনের অস্থিরতা এবং সব কিছুতেই বিরক্তভাব প্রভৃতি
আনুষঙ্গিক চিকিৎসা :-
ধূমপান এবং মাদক সেবন বন্ধ করতে হবে। ধোঁয়া এবং ধূলিধূসরিত এলাকায় থাকা নিষেধ। ঘি, মধু, প্রোটিন জাতীয় খাবার প্রযোজ্য।
হাঁপানি (Asthma)
কারণ :-
রক্তে ইওসিনোফিল বেশি হইয়া, ব্রঙ্কাইটিসে ভোগার ফলে, অ্যালার্জী রোগ থেকে বা বংশগত রোগ থেকেও হাঁপানির সৃষ্টি হয়। ফুসফুসের বায়ুবাহী নালীর সংকোচনের ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট সৃষ্টি এই রোগের মূল কারণ ।
লক্ষণ :-
এতে ফুসফুসে বায়ু চলাচলের Capacity কমে যায়। রক্তে Eosinophil বেড়ে যায়। বুকের আকৃতি পায়রার মত হয়, এছাড়া X-ray দ্বারা রোগ ধরা পড়ে। শীতকালেই বৃদ্ধি হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। বুকে সাঁইসাঁই ঘড়র ঘড়র শব্দ হয়। বুকে প্রচন্ড চাপ দম বন্ধ হবার উপক্রম হয়, ঝুঁকে বসলে কিছুটা উপশম প্রভৃতি এই রোগের
আনুষঙ্গিক চিকিৎসা :
নিয়মিত নদীর পানিতে গোসল নিষিদ্ধ। হালকা সহজপ্রাচ্য খাদ্যগ্রহণ। ঠান্ডা স্থানে বাস উচিত নয়।
ফুসফুসের প্রদাহ (Pneumonia)
কারণ :-
সর্দি, জ্বর, কাশি, ব্রঙ্কাইটিস প্রকৃতিতে দীর্ঘ দিন ভুগতে ভুগতে নিউমোকাস নামক বীজাণু ফুসফুসকে আক্রমণ করে ফলে নিউমোনিয়ার সৃষ্টি হয়।
লক্ষণ :-
প্রচন্ড জ্বর হয়, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসনালীতে প্রদাহ, শুকনো কাশি, ঘন পুঁজের মত শ্লেষ্মা, লেপাবৃত জিহ্বা, অস্থিরতা, বিকার, স্টেথিসকোপে বুকে সাঁ সাঁ শব্দ শ্রবণ, বুকে ঠোকা দিলে উপচপে শব্দ হওয়া প্রভৃতি এই রোগের লক্ষণ।
আনুষঙ্গিক চিকিৎসা :-
ভালো আলো-বাতাস পূর্ণ ঘরে বিশ্রামলাভ। দুধ, সাগু, বার্লি, ভিভা প্রভৃতি খেতে দিতে হবে। সুস্থ হলে ঝোল ভাত দিতে হবে। ঠান্ডা লাগানো নিষেধ, বুকে সরিষার তেল ও কর্পূর মালিশ উপকারী, বিকার সৃষ্টি হলে Ice Bag মাথায় দেওয়া দরকার।
বক্ষাবরণী ঝিল্লির প্রদাহ (Pleurisy)
কারণ :-
ফুসফুসের আবরণের নাম Pleura, এই Pleura এর মাঝস্তরে পানি জন্য হয়ে প্রদাহের সৃষ্টি করে একে পুরিসি বা বক্ষাবরণী ঝিল্লির প্রদাহ বলে। আবার পানি শুকিয়েও প্রদাহের সৃষ্টি করে
লক্ষণ :-
সব সময় জ্বর থাকে। বুকে ব্যথা, সামান্য ফোলাভাব ক্ষুধামন্দা, কোষ্ঠকাঠিন্য, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ। তাছাড়া বুকের X-ray দ্বারা এই রোগ নির্ণয় করতে হয়।
আনুষঙ্গিক চিকিৎসা :
ডিম, দুধ, ছানা, মাছ বা মাংস প্রভৃতি প্রোটিন যুক্ত খাবার দিতে হবে। গরম পোশাক ব্যবহার করতে হবে। বুকে গরম সেঁক উপকারী। মাদকতা এবং ধূমপান বর্জন করতে হবে।
যক্ষ্মারোগ (Tuberculosis)
কারণ :-
ধূলিধূসরিত এবং ধুম্রময় স্থানে বাস করা বা কাজ করা, স্যাতস্যাতে বাতাস ভোগ করা, পুরিসিতে ভোগা, অতিরিক্ত মাদকদ্রব্য সেবন ধূমপান প্রভৃতি থেকে কক্স্ ব্যাসিলাস নামক বীজাণুর আক্রমণ ঘটে এই রোগের সৃষ্টি হয়।
লক্ষণ :-
সর্দিকাশি, জ্বর সারতে চায় না, শরীর ক্রমশ দুর্বল হইতে দুর্বলতর হয়। ক্ষীণ শরীর এর এক বিশেষ লক্ষণ। জ্বর হয় বিশেষতঃ রাত্রিতে রাত্রিতে। রক্তমিশ্রিত শ্লেষ্মা নির্গমণ প্রভৃতি এর লক্ষণ। রোগ নির্ণয় করিতে X-ray for chest, P.A. view. করতে হয়। Blood for T. C. D.C. ERS এবং Sputum for AFB করতে হয় তবে নিশ্চিত হওয়া যায়। নিশ্চিত না হয়ে চিকিৎসা করা উচিত নয় কারণ ইহার দীর্ঘকালীন চিকিৎসা দরকার।
আনুষঙ্গিক চিকিৎসা :-
বায়ু পরিবর্তন প্রয়োজন, নির্মল বাতাস সেবন এবং প্রোটিনযুক্ত খাবার ভক্ষণ অপরিহার্য। রোগীকে পৃথক ঘরে রাখতে হবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন