রূপচর্চায় নারীর দেহ ও স্তন | Tips to Keep Your Breasts Healthy
নারীর সৌন্দর্য অনেকাংশে নির্ভর করে স্তনের আকার ও গড়নের ওপর স্তনের আকার ও গড়ন নিয়ে বেশির ভাগ মেয়েকেই কম-বেশি মানসিক অশাস্তি ভোগ করতে হয়। এক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে স্তন ছোট বা বড় মনে হওয়া। এছাড়া বয়স বাড়ার সাথে সাথে আরেকটা সমস্যা দেখা দেয়। উন্নত ও আঁটসাঁট ভাব চলে গিয়ে স্তন শিথিল হয়ে অবনমিত হয়ে পড়ে। প্রথমেই জানা দরকার মূল সমস্যা কোনটি? মূলত স্তনের আকারের সমস্যাটি মূল সমস্যা নয়। স্তন খুব বড় বা খুব ছোট মনে হয় শরীরের অন্যান্য অঙ্গের (কোমর, কাঁধ, পাছা ইত্যাদি) ও দৈহিক উচ্চতার সাথে স্তনের আকারের সামঞ্জস্যের অভাব থাকার জন্যে। এটা কিন্তু সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কেননা বাস্তবে অনেক মেয়েরই স্তন আকারে বেশি ছোট বা খুব বড় হয়ে থাকে। স্তনের আকার ছোট হওয়ার জন্য অনেকেই আবার দু'কাধ ভেতরের দিকে বেঁকিয়ে অনেকটা কুঁজো হয়ে কাঁধ দিয়ে স্তনযুগল আড়াল করে চলাফেরা করেন। এমন মানসিকতা সৃষ্টি হয় নিজের দেহকে ভাল না বাসা থেকে। একইভাবে, যাদের স্তন খুব বড়, তারা আবার টাইট করে ব্রেসিয়ার পরেন, যাতে স্তন খুব বড় না দেখায়।
সুতরাং স্তনের আকৃতি নিয়ে কোনো সমস্যা থাকরে প্রথমেই হীনমন্যতা থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিজের দেহকে ভালবাসতে শিখুন। আপনার যা আছে সেটাই আপনার প্রিয় করে তুলুন। যা নেই তার জন্য অযথা দুশ্চিন্তা করে শরীর বা মন নষ্ট না করাই ভাল। বরং যা আছে তা নিজের মত করে নিয়ে এখন থেকে সঠিক পরিচর্যার সাহায্যে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলুন।
দ্বিতীয় সমস্যা অর্থাৎ স্তন শিথিল হয়ে অবনমিত হয়ে পড়া হচ্ছে মূল ও প্রকৃত সমস্যা। স্তনের আকার যেমনই হোক না কেন, সাধারণত কুড়ি বছর বয়সের পরেই পরিচর্যার অভাবে স্তনের অটিসাঁট, নিটোল ও উন্নত বাৰ চলে গিয়ে স্তন শিথিল ও অবনমিত হয়ে পড়ে। এখানে জেনে রাখা ভাল, স্তনের আকার বা শৈথিল্য-জনিত সমস্যা কিন্তু স্থায়ী নয়। নিয়মিত ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে আবার সুউন্নত নিটোল স্তনের অধিকারী হওয়া সম্ভব। এজন্যে শুধু দরকার সাংসারিক জীবনের ফাঁকে একটু সময় করে নিয়ে নিয়মিত ধৈর্য ও যত্নসহকারে স্তনের পরিচর্যা করা। একই সাথে স্তনের গঠন একটা ধারণা থাকা দরকার যে কিভাবে স্তনের আকার পরিবর্তন কর কি কারণে স্তন সাধারণত শিথিল হয়ে অবনমিত হয়ে পড়ে।
স্তনের গঠন
এছাড়া এ সময় দেহের বিশেষ বিশেষ অংশে নারীসুলভ চর্বিস্তর বেড়ে যায় ও বুকের ত্বক বিস্তৃত হয়ে স্তন বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে সাহায্য করে। স্তনের আকার ও গড়ন বিভিন্ন মেয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের হতে দেকা যায়। অর্ধগোরকার হাড়বিহীন এ অঙ্গ বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থি, চর্বিকণা ও নরম টিস্যু দিয়ে তৈরি।
সামনে পেক্টোরালিস মেজর (Pectoralls Major) পেশি আছে , যার ওপর ভিত্তি করে স্তন আকারে বাড়তে থাকে। ব্যায়ামের মাধ্যমে নিয়মিত পরিচর্যা করে এ পেশি সংকুচিত বা প্রসারিত করে বড় স্তনকে আকারে ছোট ও ছোট স্তনের আকার বড় করা সম্ভব।
সামনে থেকে দেখলে স্তনের ঠিক মাঝখানে বোঁটার অংশকে স্তনবৃত্ত বা নিপল (nipple) বলে ও নিপলের চারপাশে গোলাকার গাঢ় খয়েরি রঙের শক্ত চামড়াকে স্তনমণ্ডল বা এরিয়লা (areola) বলে। স্তনের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে চর্বিকণা ধরে রাখার জন্য অসংখ্য ছোট ছোট টিস্যু (edipose tissue) আছে যা ছোট ছোট স্থিতিস্থাপক তত্ত্বর সাহায্যে পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে। এ স্থিতিস্থাপক তত্ত্ব দুর্বল হয়ে পড়লে স্তন শিথিল হয়ে যায়। স্তনের ভেতর স্তনগ্রন্থি (mammary gland) সন্তান হবার পর দুধ তৈরি শরু করে। স্তনে চর্বিস্তরের পরিমাণ বেশি হলে স্তনযুগল ভারি ও আকারে বড় হয়। একই ভাবে চর্বিস্তরের পরিমাণ কমে গেলে স্তনযুগল আকারে ছোট হয়। খাবার খাওয়ার সময় স্নেহ বা চর্বি জাতীয় খাবারের পরিমাণ কম-বেশি করে স্তনের আকার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা সম্ভব।
স্তনের মাপ সাধারনত ২০০ থেকে ৫০০ সি. সি. পর্যন্ত হয়ে থাকে। দু'দিকের স্তন আবার একই মাপের হয় না। সাধারণত যারা ডান হাতে কাজকর্ম করেন তাদের ডান স্তন বা স্তনের থেকে আকারে সামান্য বড় হয়। একইভাবে বাঁ-হাতি মহিলার বাঁ-দিকের স্তন সামান্য বড় হয়। সন্তান হবার পর অনেকেই আবার শুধু একদিকের স্তন থেকেই সন্তানকে দুধ খাওয়ান। সেক্ষেত্রে যে স্তনের দুধ বেশি খাওয়ানো হয়, সে-স্তনই আকারে সামান্য বড় হয়।
স্তনের উন্নত আটসার্ট ভাব নির্ভর করে বুকের ত্বকের ওপর। ত্বক রাবারের মত স্থিতিস্থাপক (elastic) তত্ত্বজাতীয় টিস্যু দিয়ে তৈরি। এজন্য ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখার চেষ্টা করা উচিত। এছাড়া স্তনের ভেরে যে সমস্ত গ্রন্থি আছে সেগুলো হতে নানা রকম তরল পদার্থ তৈরি হয় ও এই তরল পাদর্থের পরিমাণের ওপর স্তনের আকার অনেকাংশে নির্ভর করে। চলাফেরা ও দাঁড়ানোর ভঙ্গি স্তনরেখার (contour) পরিবর্তন ঘটায়। এছাড়া ব্যায়ামের মাধ্যমেও সুন্দর সপ্তরেখা তৈরি করা যায়।
সাধারণত ১৬/১৮ বছর বয়সেই স্তন সবচেয়ে বেশি সুঠাম, উন্নত নিটোল হয়ে থাকে। এরপরেই বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্তনের স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট হতে শুরু করে ও স্তনে শৈথিল্য ভাব দেখা দেয়। শরীরের করার ফলে ও পরিচর্যার অভাবে এ শিথিল ভাব আবার বেশি তাড়াতাড়ি দেখা দেয়। নিয়মিত ম্যাসেজের মাধ্যমে পরিচর্যা করে স্তনের সৌন্দর্য বহুদিন পরে রাখা যায় ও স্তনের শিথিল ভাব রোধ করা সম্ভব। এছাড়া জেনে রাখা ভাল, বাজে ধরনের ব্রেসিয়ার স্তনের পক্ষে ক্ষতিকর। খারাপ মানের ব্রেসিয়ার স্তনরেখা নষ্ট করে দেয়। সব সময় নির্ভরযোগ্য উৎপাদকের ব্রেসিয়ার পরবেন।
দুর্বলতা ও অপুষ্টিজনিত কারণে ও স্তন অপুষ্ট ও আকারে ছোট হতে পারে। সুস্বাস্থ্য ও সুউন্নত সুঠাম স্তন রপর নিবিড় সম্পর্কযুক্ত এ কথা সব সময় মনে রাখবেন। কেননা সারা দেহের গড়ন যদি ঠিকমত না হয় তবে স্তনের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য যত কিছুই করা হোক না কেন সব বার্ণ হয়ে যাবে। কারণ দেহের অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় স্তনযুগল মানানসই কিনা- এটাই হচ্ছে মূল ব্যাপার। সুতরাং সবার আগে শরীরে বিভিন্ন অঙ্গের আকার- বা মাপের মধ্যে একটা সুসামঞ্জস্য বা মানানসই ভাব বজায় রাখার জন্য। ঠিকমত পরিচর্যা করা দরকার।
এতদিন পর্যন্ত আপনি শুনে এসেছেন যে স্তন একবার শিথিল হয়ে অবনমিত হয়ে পড়লে আর কিছুই করার নেই- একমাত্র টাইট করে ব্রেসিয়ার পড়া ছাড়া। এ ধারণা কিন্তু একেবারেই ভুল। যেভাবে পরিচর্যা করা কথা বলা হচ্ছে ঠিক সেভাবে যদি পরিচর্যা ঠিকমত নিয়মিত কিছুদিন করে যেতে পারেন তবে অবশ্যই আপনি আকাঙ্খিত ফল পাবেন।
স্তনের ম্যাসেজ
ম্যাসেজ করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হল গোসল করার আগে ম্যাসেজ করার সময় সারা শরীর পানিতে ভিজিয়ে স্তনযুগল, কাঁধ, বাহুমূল (বগল) ও পেটে সাবান মাখিয়ে ফেনা তৈরি করে নেবেন সব সময় দাঁড়িয়ে ম্যাসেজ করবেন। এছাড়া সপ্তাহে ৩ দিন সাবানের বদলে তেল (অলিভ অয়েল, ম্যাসেজ করার তেল ইত্যাদি) ব্রবহার করে সামান্য পানি ছিটিয়ে ম্যাসেজ করবেন, অর্থাৎ সপ্তাহে ৩ দিন তেল-পানি ম্যাসেজ করবেন। ঋতুস্রাব বা মাসিকের ৪ দিন ম্যাসেজ বন্ধ রাখবেন।
*ম্যাসেজে প্রথম প্রথম একটু অসুবিধে হতে পারে, কিন্তু কয়েক দিনের চেষ্টাতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। ম্যাসেজের সময় সবসময় খেয়াল রাখবেন যে হাত চালাতে হবে নিচ থেকে ওপর দিকে ও স্তন ওপরে দিকে উঠিয়ে ম্যাসেজ করতে হবে। সাবান বা তেল দিয়ে স্তনযুগল সবসময় পিচ্ছিল করে রাখবেন।
* তালুতে সামান্য চাপ দিয়ে হাত তুলতে থাকুন ডান স্তনের ওপর দিয়ে একেবারে ডান কাঁধ অবধি। আবার বাঁ-হাত সরিয়ে ডান স্তনের নিচে রেখে একইভাবে তালুতে চাপ দিয়ে ওপর দিকে তুলতে থাকুন। এভাবে ৫ বার ডান স্তন ম্যাসেজ করুন।
*বাঁ-হাত পেটের ডান দিকে সামান্য চাপ দিয়ে রাখুন। ডান হাতে ডান স্তন দৃঢ়ভাবে ধরে ক্রমাগত বেশ কয়েকবার স্তন বাঁ- দিকে ও ডান দিকে নাড়ান। ডান স্তনের জন্য ক ও খ ম্যাসেজ করলেন। এবার বাঁ-স্তনের জন্য হাত বদল করে ঠিক একইভাবে ক ও খ ম্যাসেজ করুন। দু'দিকের স্তনের জন্য ক ও খ ম্যাসেজ শেষ হলে স্তনে ও হাতে আবার সামান্য সাবান মাখিয়ে নিন ও গ ম্যাসেজের জন্য তৈরি জন ।
* দু'হাত দু'স্তনের ঠিক নিচে রেখে সামান্য চাপ দিয়ে ওপর দিকে তুলতে থাকুন বুকের ঊর্ধ্বাংশ দিন। এভাবে চাপ দিয়ে হাত তোলার সময় সাবানের ফেনায় স্তনযুগল পিছলে যাবে। ৫ বার এ ম্যাসেজ করুন।
*ডান হাত পেটের ওপর রাখুন। বাঁ-হাতে আঙুল দিয়ে ছবির মত বাঁ-স্তন মুঠো করে ধরুন যাতে বুড়ো আঙুল নিপলের থেকে ওপরে থাকে। বাঁ-হাত চাপ দিয়ে ধীরে ধীরে ওপর দিকে ভুলতে থাকুন যতক্ষণ না স্তন পিছলে যায়। ৫ বার এ ম্যাসেজ করুন
*দাঁড়িয়ে ডান হাতে বাঁ-স্তন নিচের থেকে গোল করে ধরুন যাতে তর্জনী নিপলের ওপর ও অনামিকা (কড়ে আঙুলের পরের আঙুল) স্তনের ঠিক নিচে বুকের ওপর থাকে। এবার জোরে চাপ দিন। ৫ বার এভাবে ম্যাসেজ করুন।
*বাঁ-হাতে বাঁ-স্তনের একেবারে ওপরের অংশে (কন্ঠাস্থির নিচে) ও ডান হাত বা স্তনের নিচে রেখে তীরচিহ্ন অনুসারে আলতো চাপে দু'হাত একই সাথে বিপরীত দিকে ঘুরিয়ে ৫ বার ম্যাসেজ করুন। পরে ডান স্তনে এ ম্যাসেজ করার সময় দু'হাত ঘোরাতে হবে ঠিক উল্টো মুখো।
* বাঁ-হাত বাঁ-স্তনের পাশ থেকে গোল করে ধরুন। বাঁ-হাতের তালু স্তনের পাশে ও আঙুলগুলো স্তনের তলায় থাকবে। ডান হাত দিয়ে ছবির মত স্তন একটু তুলে ধরে ১৫ সেকেন্ড দু'হাতে জোরে চাপ দিয়ে স্তন মুচড়ে (squeeze) ধরুন।
*বাঁ হাত দিয়ে পাশ থেকে বাঁ-স্তন গোল করে ধরুন। বাঁ-হাতের তালু স্তনের পাশে ও আঙুল ছড়ানো অবস্থায় রাখবেন,
*যাতে তর্জনী ও বুড়ো আঙুলের মধ্যে যথেষ্ট ফাঁক থাকে। ডান হাত স্তনের অন্য পাশে ছবির মত রাখুন ও অল্প চাপ দিতে দিতে নিপলের ওপর দিয়ে বাঁ-হাতের আঙুলের ফাঁক পর্যন্ত নিয়ে যান। ঠিক একইভাবে চাপ দিতে দিতে ডান হাত স্বস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে আসুন। ৫ বার এভাবে ম্যাসেজ করুন।
* বাঁ-হাত দিয়ে বাঁ-স্তনের তলা থেকে গোল করে ধরুন। ডান হাত বগলে রেখে চাপ দিতে দিতে সরাতে থাকুন নিপলের ওপর দিয়ে স্তনের এপাশ পর্যন্ত। ৬ বার এ ম্যাসেজ করুন।
*বাঁ-দিকের স্তনে গ থেকে ৭ রকম ম্যাসেজ করলেন। এবার হাত দাঁড়ানোর বঙ্গি বদলে একইভাবে ডান স্তনেও গ থেকে ঝ ম্যাসেজ করুন।
নিপলে রক্ত সঞ্চালন কম হলে অনেকের নিপল কুকড়ে ভেতরে ঢুকে থাকে যাকে ইনভার্টেড নিপল বলে। এটি খারাপ লক্ষণ। স্বাস্থ্যকর স্তনের নিপল পুষ্টি ও পরিপূর্ণ এবং উঁচিয়ে থাকবে, রঙ হবে গোলাপী বা তামাটে ম্যাসেজের সময়ে নিপল দু'আঙুলে ধরে টেনে ওপরে তুলে দেবেন ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন