ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ফুল দিয়ে সমাধান | Tips to use flowers to treat skin problems

 ফুলের ভেষজ গুণ

ফুলের ভেষজ গুণ

ফুল প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর অবদান,ফুলের জগৎ দৃশ্যত যতটা দৃষ্টিনন্দন ততটাই উপকারী।ফুলের রঙিন পাপড়ির মোড়কে লুকোনো থাকে প্রকৃতির অনবদ্য নির্যাস যা রূপচর্চার জন্য অসাধারণ। ফুলের সুবাস যেমন মন মাতায়, খোলা চুলে, বেণীতে খোঁপায় ফুলের সাজ আপনার সৌন্দর্যে এক অনন্য মাত্রা যোগ করবে। এছাড়া ফুলের রস নিরাময় করে শরীরের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। শুধুমাত্র নিরাময় গুণ নয়, ত্বকও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও ফুলের রস বিশেষ গুণ সম্পন্ন উপাদান। রোগ নিরাময়ে এবং রূপচর্চায় ফুলের ব্যবহার সুপ্রাচীন। রাজবৈদ্য থেকে শুরু করে কবিরাজ চিকিৎসা পদ্ধতিতে ফুল দিয়ে তৈরি হত অব্যর্থ ঔষুধ। সেই অব্যর্থ ঔষুধের গুণ সমৃদ্ধ ফুলের কিছু ব্যবহার সমন্ধে কিছু কথা না বললেই নয় ।

গোলাপ  ফুলের ভেষজ গুণ | রূপচর্চায় গোলাপের পাপড়ি

গোলাপ  ফুলের ভেষজ গুণ


গোলাপ একমাত্র ফুল যেটি সারা বছর সব ঋতুতেই পাওয়া যায়। গোলাপের বৈচিত্র্যতার সীমা নেই। পৃথিবীতে হাজার রকমের গোলাপ ফোঁটে।গোলাপ ব্যবহারে লাবণ্যময় উজ্জ্বল ত্বক | গোলাপকে ফুলের রাণী বলা হয়। সেই ফুলের রাণীর কিছু গুনের কথা এবার জানা যাক।

গোলাপের রূপের সঙ্গে পাল্লা দেয় এটির গুণের বহর। সংস্কৃতে গোলাপকে বলা হয় শতপত্রী। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে গুণের কারণে গোলাপের কদর সবচেয়ে বেশি। গোলাপের পাপড়িতে শরীর শীতল করার গুণ আছে। আর ঈষৎ তিক্ত স্বাদের পাপড়িগুলি কোষ্ঠকাঠিন্যের দূর করে। কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে ত্বকে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। গোলাপের পাপড়ির রসে রয়েছে। ত্বকের দাগ মিলিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা। মুখের যে কোন দাগের উপর টাটকা গোলাপের পাপড়ি চটকে রাতে ঘুমোবার আগে লাগান। গোলাপের রসের জাদুকরী ক্ষমতা। 

মুছে দেবে মেছতা বা অন্য যে কোন দাগ। ত্বক পরিষ্কার করার পরে টোনিং-এর প্রয়োজন ত্বকের বড় হওয়া লোমকূপের মুখ বন্ধ করতে গোলাপের রস অব্যর্থ ।

সুগন্ধির সঙ্গে গোলাপের সম্পর্ক বহুদিনের। গোসলের সময় গোলাপের পাপড়ি বাটা গায়ে মাখলে ত্বকে যেমন উজ্জ্বল আভা আসে তেমনই গোলাপের সগন্ধ সারাটা দিন ঘিরে থাকবে আপনার শরীর, মন। গোসলের সময়ে শুকনো গোলাপের পাপড়ি গুঁড়োও ব্যবহার করতে পারেন এক্সফোলিয়েটর হিসাবে। এটি শরীরের মরাকোষ ঝরিয়ে ত্বকে আনবে উজ্জ্বল আভা। শীতলতা ও সুগন্ধ। সৌন্দর্যের আর একটি অশেষ সুন্দর ঝকঝকে দাঁত। গোলাপের পাঁপড়ি ফোটানো-রস ব্যবহার করতে পারেন মুখ ধোয়ার জন্য।

গোলাপের ঔষধি গুণ দাঁত ও মাড়ি শক্ত করে। মুখের ভেতরে কোনও আলসার থাকলেও তা সেরে যাবে। সৌন্দর্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ অবশ্যই আপনার কণ্ঠস্বর। গলায় সর্দি বা ওই জাতীয় কারণে কণ্ঠস্বর খারাপ হয়ে গেলে গোলাপের পাপড়ি চিবিয়ে খান মধুর সঙ্গে মিশিয়ে। বাইরে থেকে রূপচর্চা যতই করুন না কেন সুবাস্থ ছাড়া তা অসম্পূর্ণ রয়ে যায় । তাই ঘরেই তৈরি করুন গোলাপের টনিক অথবা জ্যাম। 

গুলখণ্ড সমপরিমাণ গোলাপের পাপড়ি ও চিনি নিন। এই দুটি উপকরণ মিশিয়ে নিন ভালভাবে। পরিচ্ছন্ন একটি কাঁচের জারে ভরে রোদে পনেরো দিন রাখুন। এরপর রোদ থেকে সরিয়ে ঠাণ্ডা কোনও জায়গায় রেখে দিতে হবে মাস খানেক। সকালে এক গ্লাস দুধের সঙ্গে অথবা পানের মিষ্টি মসলা হিসেবে নিয়মিত খেতে পারেন। গোলাপের পাপড়ি ফেস মাস্ক হিসাবেও অসাধারণ। একমুঠো গোলাপের পাপড়ি বেটে নিন। মুখে লাগিয়ে রাখুন কুড়ি মিনিট। পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। গোলাপ জল ডাইড্রম হিসেবেও ভাল। এটি চোখের ক্লান্তি ও ময়লা দূর করতে সাহায্য করে।

 রূপচর্চায়  জুঁই ফুলের অবদান 

রূপচর্চায়  জুঁই ফুলের অবদান

গ্রীষ্ম ও বর্ষা কালে জুঁই ফুল ফোটে। জুঁইয়ের সংস্কৃত নাম জাতি। রূপ ফোটানোর সঙ্গে জুঁইয়ের নিরাময়গুণ অনেক। এটি শরীর শীতল করে, জ্বরের উপশম করে। সানস্ট্রোকের মতো অসুস্থতায়ও জুঁই ফুল অব্যর্থ।

স্কিন টনিক রূপেও জুঁইয়ের রস অসাধারণ। ফুটন্ত জলে জুঁইয়ের পাপড়ি সিদ্ধ করে নিন । এরপর ছেঁকে নিন। জুঁইয়ের এই নির্যাস ফ্রিজে রেখে দিন। প্রয়োজন মতো তুলোয় ভিজিয়ে মুখে লাগান স্কিন টনিক হিসাবে। জুঁইয়ের ফেস মাস্ক ত্বকে উজ্জ্বলতা আনে গ্রীষ্মের হিট-র‍্যাশ থেকে মুক্তি পেতে জুঁইয়ের ফেস মাস্ক অতুলনীয় । ফেস মাস্ক তৈরি করতে জুঁইয়ের পাতাও পাপড়ি বেটে চন্দন ও মুলতানি মাটির ও গাজরের রস এক সঙ্গে ভালভাবে মিশিয়ে নিন। সপ্তাহে একবার এই মিশ্রণটি ব্যবহার করুন কেস মাস্ক হিসেবে।

 চোখের কোলে কালিপড়া এড়াতে জুই ফুলের ঠাণ্ডা রস তুলোয় ভিজিয়ে চোখের পাতার উপরে লাগিয়ে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখুন। জুইয়ের রস মাউথ ফ্রেশনার হিসেবে যেমন ব্যবহার করা যায় তেমনই এটি মুখের ঘা উপশমে কার্যকরী। প্রত্যেকদিন কয়েকটা জুঁইয়ের পাপড়ি চিবিয়ে খেলে ঘুম ভাল হয়। আর ঘুম ভাল হলে ত্বক হয় মসৃণ, উজ্জ্বল আভা যুক্ত ।

রূপচর্চায় গাঁদা ফুল

রূপচর্চায় গাঁদা ফুল

উজ্জ্বল রঙই শুধুমাত্র গাঁদার বিশেষত্ব নয়। গাঁদা ফুল গুণেও অতুলনীয়। হাল্কা হলুদ থেকে গাঢ় কমলা রঙের এই ফুল আর্নিকা? গাঁদা ফুল ও পাতা কোনও ক্ষত মূহুর্তে সারানোর ক্ষমতা রাখে।

এটির অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে। ত্বকে কোনও রকমের সংক্রমণে এটির রস অব্যর্থ ঔয়ুব। হাত পায়ের কড়া বা ওয়ার্টস সারাতেও গাঁদার ডাঁটার রস কার্যকর। যারা রোদে বেশি ঘোরাঘুরি করেন তাঁদের ত্বকে একধরনের কালচে ছোপ পড়ে। এই ছোপ দূর করতে গাঁদার পাপড়ি বাঁটা লাগান দাগযুক্ত ত্বকে। গাঁদার রস কমলালেবুর রস এক সঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন আভাময় ত্বকের জন্য। কাঁচা দুধের সঙ্গে গাঁদার রস মিশিয়ে মুখে নিয়মিত লাগালেও বিবর্ণ ত্বকে ফিরে আসবে নতুন চমক।

চুলের যত্নে জবা ফুল

চুলের যত্নে জবা ফুল

আজকাল নানা রঙে হাইব্রিড জবা দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু রূপচর্চার জন্য শুধুমাত্র লাল জবার ব্যবহার ক। লাল জবার মধ্যে পঞ্চমুখী জবার ব্যবহারই উৎকৃষ্ট। জবার মতো ফুলের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে অকালে চুল পাকা রোধের ক্ষমতা। জবার পাপড়ি বেটে আমলার রসের সঙ্গে মিশিয়ে রাতভর রেখে দিন লোহার পাত্রে। পরদিন চুলের গোড়ায় গোড়ায় বিলি কেটে লাগান। একই অনুপাতে জবার রস ও জলপাই বাটা চুলে লাগালে অল্প বয়সে চুল পাকার হাত থেকে রেহাই পেতে পারেন।

শঙ্খ পুষ্পী

শঙ্খ পুষ্পী

অসময়ে বয়সের ছাপ দূর করতে - ফুল শঙ্খের আকারের এই ফুলটি বহু গুণ সমন্বিত। মস্তিষ্কের উপর এটির প্রভাব যেমন সুনিশ্চিত তেমনই সার্বিক স্বাস্থ্যোন্নতির ক্ষেত্রেও এটির অবদান অনস্বীকার্য। নিশ্চিন্ত নিরাপদ ঘুমের সঙ্গে সৌন্দর্যের সম্পর্ক সরাসরি। ঘুম ভাল না হলে ত্বকের নানা রকম সমস্যা যেমন দেখা দেয় তেমনই বলিরেখা, অসময়ে বয়সের ছাপ ইত্যাদি নানা সমস্যা ঘিরে আসে। শঙ্খ পুষ্পী এক ধরনের টনিকের কাজ করে যায় যা স্বাস্থ্যের উন্নতি যেমন ঘটায় তেমনই মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায়। 

তিন ভাবে শঙ্খ পুষ্পীর টনিক গুণের সাহায্য নিতে পারেন। প্রথমত শঙ্খ পুষ্পী গাছের রস খেতে পারেন। অথবা শুকনো শঙ্খপুষ্পী ফুলের বড়ো খাওয়া যেতে পারে অথবা শঙ্খ পুষ্পীর শুকনো ফুল রাতভর জলে ভিজিয়ে রেখে সেই জসটি খেলেও উপকার পাবেন খা"য়া ছাড়াও ত্বকের উপরের সরাসরি ব্যবহার করতে পারেন শৃঙ্খপুষ্পী। এটি রক্তের সংবহন দ্রুত করে যেমন তেমনই মুখের বিবর্ণভাব দূর করে। শঙ্খ পুষ্পী-রূপটান তৈরির পন্থাটা যতটা সহজ এটির উপকারিতা তহটাই বেশি। ছটি শঙ্খ পুষ্পী ফুল ১ চা চামচ চন্দন বাটা, ৪ চা-চামচ ঠাণ্ডা দুখ ও ২ চা-চামচ মুলতানি মাটি মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে রাখুন আধঘন্টা। সপ্তাহে একবার এই মিশ্রণটি মুখে লাগালে মুখে বয়সের ছাপ পড়া থেকে মুক্তি পাবেন শঙ্খ পুষ্পীর গুণে।

লেবু ফুল 

লেবু ফুল

লেবু ফুলের ভূমিকা অনন্য। ত্বক পরিষ্কার করার অসীম ক্ষমতা লুকানো রয়েছে লেবু ফুলের পাপড়িতে। নিয়মিত লেবু ফুলের রূপটান ব্যবহার করলে ত্বকে আসবে উজ্জ্বলতা। আপনি ঘরেই তৈরি করতে পারেন লেবুফুলের ক্লিনজার। এই মিনজারটির নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক রক্ষা পায় ব্রন-থেকে। লেবু ফুল ক্লিনজার তৈরি করতে আপনার লাগবে একগুচ্ছ লেবু ফুল, ১০টি তুলসিপাতা, ১০টি পুদিনা পাতা, ৪ চা চামচ টমোটো জুস ও ২ চা চামচ মুলতানি মাটি। এই মিশ্রনটি মুখে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।

আমরা জানাচ্ছি বেশ কিছু রূপ সমস্যার ফুলের সমাধান। রূপ চর্চায় অর্ধেকই হলো নিয়মিত ত্বক ও চুলের যত্ন নেয়া। নিয়মিত যত্ন বলতে ক্লেনজিং টোনিং ও ময়শ্চারাইজিং। ক্লিনজিং-এর জন্য লেবু ফুলের ক্লিনজারটি যেমন ব্যবহার করতে পারেন তেমনই টোনিং-এর জন্য গোলাপ জল ও ময়েশ্চারাইজিংঙে জন্য দুধের সর ও গোলাপ ফুলের পাপড়ি বাটা ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও ত্বকের বিশেষ যত্ন নিতে হবে অন্তত ৭ দিনে একবার। ১৫ দিনে বা মাসে ১ বার ফেসিয়াল করুন।

ফুলের ফেশিয়াল

ফুলের ফেশিয়াল

ফেশিয়াল কেমন হবে তা নির্ভর করে ত্বকের ধরনের উপর। স্বাভাবিক ও শুষ্ক ত্বকের ফেশিয়াল পদ্ধতি। প্রথমে ক্লিনজিং।

দুধের রস ও গোলাপের পাপড়ি কুচি একসঙ্গে মিশিয়ে এই মিশ্রণটি সারা মুখে আলতো করে ম্যাসাজ করুন। এরপর ভেজা তুলো বা ভেজা টাওয়েল দিয়ে মুছে ফেলুন। এরপরে গোলাপ ফুলের রস, সঙ্গে বেলীফুল বা জুঁইফুলের রস, কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল পাকা পেঁপে অথবা পাকা কলা একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে ম্যাসাজ করুন আধঘণ্টা। ম্যাসাজের শেষে একটি তুলোর প্যাডে গোলাপ ও কমলালেবুর রসে ভিজিয়ে চেপে রাখুন মুখে। যদি ত্বক শুষ্ক হয় তাহলে এইসময়ে ব্যবহার করতে হবে আনারস চন্দ্রমল্লিকার ভারা। এবারে পালা মাস্ক। শুষ্ক থেকে স্বাভাবিক ত্বকের জন্য নিম্নলিখিত উপায়ে প্যাক তৈরি করুন। 

১ চা-চামচ আমন্ড পাউডার ১ চা-চামচ মধু, অর্ধেক চন্দ্রমল্লিকার পাপড়ি ও রজনীগন্ধার দুটি কুঁড়ি, মুলতানি মাটিও নারকেলের দুধ একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই প্যাকটি মুখে লাগিয়ে রাখুন, পঁচিশ মিনিট। অল্প শুকিয়ে গেলে কাঁচা দুধ দিয়ে অল্প ফেটে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটায় ধুয়ে ফেলুন।

এবারে আসা যাক তৈলাক্ত ত্বক প্রসঙ্গে। তৈলাক্ত ত্বরের পরম বন্ধু পলাশ ফুল। Flame of forest নামে পলাশের গুণ স্বীকৃত কসমেটোলজির জগতে। তৈলাক্ত ত্বক পরিষ্কার করুন পলাশ ফুলের রস ও নিমের রস দিয়ে। তৈলাক্ত ত্বকে বেশি আর্দ্রতা দরকার নেই। কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করুন কাঁচা দুধ, লেবুর রস ও পলাশ ফুলের মিশ্রণ দিয়ে। এরপরে আনারস, আঙুর কিংবা স্ট্রবেরির রসের সঙ্গে পলাশ ফুলের রসে তুলো ভিজিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। 

এবারে মাস্ক। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য মাস্ক তৈরি করুন নিম্নলিখিত উপায়ে ১ চা-চামচ মুলতানি মাটি, একটি জায়ফল, একটি গোটা গোলাপের পাপড়ি, একটি চামেলির পাপড়ি, ১টি লেবুফুল মিশিয়ে নিন শসার রস দিয়ে। মুখে লাগিয়ে রাখুন। অল্প শুকিয়ে আসলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। শুধুমাত্র ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে নয় ত্বকের সমস্যা দূর করতেও ফুলের গুণের জুড়ি নেই।

ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ফুল দিয়ে সমাধান

যেমন বয়ঃসন্ধির একটি সমস্যা লেখনই তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীদেরও। ব্রণ একটি বড় সমস্যা। আপনার ব্রণ নির্মূল করতে সহায়ক হবে যে পদ্ধতি সেটি হলো মূলতানি মাটি, ৫টি পলাশ ও ২টি লেবু ফুল বাটা, আধখানা লেবুর রস, ২ চা-চাম শসার রস একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান। শুকিয়ে এলে আপেলের রস দিয়ে মুখ ভিজিয়ে, অল্প ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্ক শীতে ব্যবহারের সময়ে ত্বক যদি বেশি শুকনো হয়ে যায় তাহলে এটির সঙ্গে কমলালেবু অথবা টমাটোর রস ব্যবহার করতে পারেন। এই প্যাকটি লগাবার আগে গোলাপ জলে কর্পূর গুলে তা দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন।

 অনেক সময়ে ব্রণ খুব বড় হয়ে পেকে যায়। সেক্ষেত্রে পেঁপের আঠা ও গাঁদা ফুলের রস একঙ্গে মিশিয়ে ব্রণের উপরে লাগাবেন।

দাগ বা পিগমেন্টেশনের ক্ষেত্রে এক চা-চামচ চন্দন বাটা, এক চিমটে হলুদ, আধাখানা জায়ফলের গুঁড়ো, গাঁদা, গোলাপ ও কমলালেবুর রস বা আপেলের রস একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। মিনিট দশেক মিশ্রণটি মেখে রেখে কাঁচা দুধে তুলো ভিজিয়ে মুছে নিন।

চোখের কাল দাগ

চোখের কোলে কালো দাগ বা বলিরেখা দেখা দিলেও আপনি সাহায্য নিতে পারেন ফুলের রসের।দুটি পলাশ ফুল ও একটি গোলাপ ফুল কেটে নিন আলুর রসে। এই মিশ্রণে কয়েক ফোঁটা আমণ্ডের তেল দিন। মিশ্রণটি চোখের চারপাশে আঙুলের আলতো চাপে কয়েক মিনিট মালিশ করার পরে পনেরো মিনিট রেখে দিন। ভেজা তুলো দিয়ে হাল্কা করে মুছে ফেলুন।

ত্বকের বলি রেখা

ত্বকে বলিরেখা দেখা দিলে আমও তেলে গোলাপ বা লিলি ফুলের পাপড়ি বাটা মিশিয়ে মুখে মালিশ করুন। এরপরে এই প্যাকটি লাগান। আধ চা-চামচ আমও গুঁড়ো, গোলাপের পাপড়ির রস, পাকা কলা ও পাকা পেঁপে চটকে একটি বেল বা জুঁইয়ের রস ও একটি লিলির পাপড়ি বাটা একসঙ্গে মেশান দুধের সর ও কয়েক ফোঁটা আমও বা তিল বেলির সঙ্গে। এই প্যাকটি লাগিয়ে তারপরে অল্প শুকিয়ে গেলে শসার রস নিয়ে ভিজিয়ে অল্প নেড়ে নিন। ঠাণ্ডা পানিতে মুখের ত্বক ধুয়ে নিন।

পেডিকিওর

আপনার শরীরে আরো দুটো গুরুত্বপূর্ণ অংশে হাত ও পা। হাত পায়ের যত্নে আমরা অনেক সময় অবহেলা করি। কিন্তু এটা ঠিক নয়। সুন্দর হতে হলে আপনাকে হতে হবে সর্বাংগীন সুন্দর। তাই প্রয়োজন হাত ও পায়ের বিশেষ ) যত্ন। এর জন প্রয়োজন পেডিকিউর ও মেনিকিউর। সৌন্দর্যহানি নিশ্চয়ই ঘটে যদি আপনার পা দুটি পরিচ্ছন্ন, কোমল না হয়। পা সুন্দর করতে প্রথমে গরম পানি ও বেসন দিয়ে পা ধুয়ে নিন। আধ লিটার দুধে গোলাপের পাপড়ি; পোস্ত ফুল দিন। দুধে পা ডুবিয়ে রাখুন মিনিট দশেক। পরে ফুলের পাপড়ি দিয়ে পা ঘষতে থাকুন। এরপরে লেবুর রস ও চিনি দিয়ে পায়ে ঘষতে থাকুন যতক্ষণ না চিনি গলে যায়। পায়ের ত্বক খুব শুষ্ক হলে কয়েক ফোঁটা তিল তেল মেশাতে পারেন।

 এরপরে গোলাপের পাপড়ি বাটা ও অলিভ অয়ের তেলের মিশ্রণ পায়ে ঘষুন। কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করার পরে শুকনো তোয়ালে দিয়ে মুছে ফেলুন।এই শীতে পা পরিষ্কার করতে চিনা বাদামের গুঁড়া এক চামচ, চন্দন ও গাঁদার পাপড়ি রস একসঙ্গে মিশিয়ে পায়ে ঘষতে পারেন। পাঁচ দশ মিনিট বাদে মুছে ফেলুন।

ম্যানিকিওর

নিয়মিত হাতের যত্ন নেওয়াও প্রত্যেকের উচিত। ১ কাপ দুধে এক চিমটে কাঁচা হলুদ বাটা মেশান। তাতে লেবু ফুল ও চন্দ্রমল্লিকার পাপড়ি দিন। হাত দুধে ভেজান। পাঁচ দশ মিনিট বাদে পাপড়িগুলো দিয়ে ঘষে নিন। এবারে ম্যাসাজ করুন গোলাপের পাপড়ির রস ও কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল তেলের মিশ্রণ দিয়ে। শেষে চন্দন, কাঁচা দুধ ও গোলাপের পাপড়ি একসঙ্গে মিশিয়ে এটি দিয়ে ম্যাসাজ করুন পাঁচ দশ মিনিট তারপর মুছে ফেলুন শুকনো, নরম কাপড় দিয়ে।

সতর্কতা

রূপচর্চায় ফুল ব্যবহারের সময়ে বাজার থেকে কেনা ফুল ধুয়ে নেবেন। কারণট অনেক সময় ফুলে কীটনাশক ব্যবহার ত্বকে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। সবচেয়ে ভাল নিজেই বাড়িতে ফুল গাছ লাগান। ফুলে রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করবেন না। জানা ফুল ব্যবহার না করাই ভাল। কারণ, ফুলের রসে ভেষজ গুণ যেমন থাকে তেমনই অনেক ফুলে বিষাক্ত রসও থাকতে পারে যা ত্বকের ক্ষতি করে।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Simple 10 Scenery Drawing Practice for Beginners step by step

Make Money Online: Unlocking Digital Opportunities