ফল দিয়ে চিকিৎসা পদ্ধতি | Treatment Methods with Fruits

 ফল দিয়ে চিকিৎসার পদ্ধতি

ধৈর্য সহকার ফল খাওয়ানোর চিকিৎসা করতে পারলে নিশ্চয়ই উপকার পাওয়া যাবে । এক সপ্তাহ ধরে পাকস্তলী ও অন্ত্রের মল জোলাপ খেয়ে পরিষ্কার করে নেএয়ার পর পাকা পেঁপে এবং পেয়ারা খাওয়া শুরু করুন । প্রতিদিন খাওয়া-দাওয়ার বিধি নিষেধ মানতে হবে যেমন যব ও বেসনের তৈরি রুটি এবং তার সঙ্গে কাঁচা পেঁপে ও পাকা পেঁপে দু'টিই খুবই বলদায়ক ও উপকারী । পেঁপে খাবার হজমও করায় এবং কোষ্ঠ পরিষ্কারও করে । কাঁচা পেঁপের দুধও খুব উপকারী । এক ফোঁটা কাঁচা পেঁপের দুধ প্রায় তিন শো গ্রেন স্টার্চ (শর্করা) হজম করায় ।

কমলালেবু, আম, আঙুর, ডালিম, জাম এই সব ফলের রস প্রতিদিন সকাল-বিকাল খাওয়া খুব দরকার । জামের রস তো এই অসুখে খুবই উপকারী।

শীতকালে ডালিম, পেয়ারা, চিলগোজা (শুকনো ফল), বর্ষাকালে জাম খেলে উপকার পাওয়া যায় ।

জামের চিকিৎসা

বর্ষাকালে জাম প্রচুর পাওয়া যায় । এই ফলের উপকারিতা সকলের হয়তো । জানা নেই এই ফলে প্রচুর আয়রন আছে । জামের বিচি শুকিয়ে মিহি পাউডারের মতো গুঁড়ো করে নেবেন । প্রতিদিন এই পাউডার অসুখের গুরুত্ব অনু্যায়ী তিন থেকে চার বার করে তিন গ্রাম ১/২ চা চামচের মতো মাত্রায় পানির সঙ্গে মিশিয়ে দশ থেকে পনেরো দিন খেলে অসুখ কমবে এবং রোগী দু মাসে সম্পূর্ণ সুস্ত হয়ে যেতে পারে ।

জামের রস অত্যন্ত উপকারী । ঔষধের দোকানে জামের রসের এক্সট্র্যাক্ট কিনতে পাওয়া যায় । এর ডাক্তারি নাম ‍'জ্যাম্বোলানি এক্সট্র্যাক্ট' । দিনে আট দশ ফোঁটা করে তিনবার পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে প্রকৃত উপকার পাওয়া যাবে । এই ঔষধ যতদিন খাওয়া হবে ততদিন বিশেষভাবে খাওয়া-দাওয়ার ধারাকাট করতে হবে । ভাত, আলু, মিষ্টি না খাওয়াই ভাল । রুটি, মুগের ডাল ও পালং শাক বেশি করে খাবেন ।

জ্বরের চিকিৎসায় ফল

সব অসুখেই ফল খাওয়া চলে । নিয়মিত ফল খেলে বহুদিন বেঁচে থাকা যায় ও অকালমৃত্যু ঘটে না । মুনি ঋষিরা ফল খেয়েই দীর্ঘজীবন লাভ করতেন । তবে এলোপাথাড়ি ভাবে ফল খেলে পরিণাম ভালো হবে না বরঞ্চ তা থেকে অন্য রোগের উৎপত্তি হতে পারে । যে কোনও লোকের শরীরের প্রয়োজন মতো ফল খাওয়া দরকার । জীবনে জ্বর হয়নি এমন মানুষ খুব কমই আছেন । জ্বরের সময় ফলের রস বিশেষ করে ডালিম বা কমলালেবুর রস খাওয়া ভাল । এই সব রস শরীর ঠাণ্ডা করে এবং খেতেও সুস্বাদু । যখন জ্বরে গা পুড়ে যায় এবং জিহ্বা শুকিয়ে যায় তখন প্রচুর পরিমানে রস খাওয়ানো উচিত । পিত্তজ্বর ও ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে সাধারনত খুব তেষ্টা বেড়ে যায় । তখন কিছু খেতে ইচ্ছে করে না-মুখে তেতো লাগে । সেই সময় পানি খাওয়ার বদলে কমলালেবুর রস খাওয়াতে পারলে শরীর তাড়াতাড়ি চাঙ্গা হয়ে উঠবে ।

জ্বরে আপেল খাওয়া

জ্বরের সময় আপেল খাওয়ালে তাপ কমে যাবে । তেড়ে জ্বর আসছে বলে মনে হলে রোগীর যদি তখন খাওয়ার মতো অবস্তা থাকে তাহলে একটা বা দুটো আপেল খেলে বেশি জ্বর এড়ানো যাবে । তবে লক্ষ্য রাখতে হবে এতে যেন রোগীর কোষ্ঠকাঠিন্য না হয় । জ্বরের সময় যদি খুব তেষ্টা পায় ও গলা শুকিয়ে যায় তাহলে তাজা আপেলের রস ( আট চা-চামচ ) পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে উপকার হবে । আপেলের টুকরো সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন তার রস বের করে নিয়ে সমপরিমাণ পানির সঙ্গে মিশিয়ে রোগীকে খাওয়ালে রোগীর প্রচণ্ড তেষ্টার ভাব কমবে ।

জ্বরে পাতিলেবু

গরম গেলে বা পেট গরম হয়ে জ্বর হলে এবং জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে পায়খানা ও বমি হলে পাতিলেবু খুব কাজ করে । খুব তেষ্টা পাওয়ার জন্য যে কষ্ট হয় সেটারও উপশম হয় । একটা গোটা বা আধখানা পাতিলেবুর রস টিপে বের করে গ্লাসে চিনির সঙ্গে মিশিয়ে  প্রয়োজন মতো পানি দিয়ে রোগীকে পান করতে দিন । এতে অস্বস্তি কমবে এবং পায়খানা ও বমি বন্ধ হবে । কাগজি লেবুও জ্বরে খুব নির্ভরযোগ্য । নিয়মিত খেলে ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে । এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ পাকা হলুদ রঙের কাগজি লেবুর কথাই বলা হচ্ছে কাঁচা সবুজ রঙের নয় । সদ্য গাছ থেকে পড়া সবুজ রঙের লেবু খেলে উলটো ফল হবে অর্থাৎ জ্বর হতে পারে ।

বছরে যে কোনও সময়ে জ্বরের জন্যে লেবুর পানীয় বা লেমোনেড :

পাঁচ ছয়টা পাতিলেবুর খোসা ছাড়িয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে নিন । এবারে রস বের করে নিয়ে একটা চুনামাটির পাত্রে রাখুন ।তিনশো গ্রাম ( প্রায় দু'কাপ এর মতো ) ফুটন্ত পানি রসে ঢালুুন । ঠাণ্ডা হলে প্রয়োজন মতো চিনি মিশিয়ে রোগীকে বারে বারে একটু একটু করে খেতে দেবেন । এই পানিয়টি জ্বরের পক্ষে উপকারী এবং খেতেও সুস্বাদু । সব রকম জ্বর এবং অন্যান্য উপসর্গ যেমন বমিভাব, তেষ্টা, অস্বস্তি সবই কমে ।

ম্যালেরিয়া জ্বরে ফলের চিকিৎসা

ম্যালেরিয়া জ্বরের সাধারনত তিনটি ধাপ দেখা যায় । প্রথমে জ্বর আসে খুব শীত করে । গরম চাদর জড়াতে হয় । দ্বিতীয় অবস্তায় গা পুড়ে যাওয়ার মতো তাপমাত্রা উঠে যায় । তৃতীয় অবস্তায় রোগী ঘামতে থাকে এবং ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে-তাপ কমে যায় ।

সাধারনত কুইনাইনের চিকিৎসাই সকলের জানা আছে । কিন্তু ফলও খুব রোগ সারাতে পারে । একটি পাতিলেবুর আধখানা করে কেটে তার উপরে গুঁড়ানো ফিটকারি বা চুন ছিটিয়ে আগুনে গরম করুন । তারপরে রসটা চুষে খান । সঙ্গে একটু গরম পানি খেতে হবে এবং গায়ে গরম জামা দিয়ে রাখতে হবে । জ্বর আসবার তিন ঘণ্টা আগে এই লেবুর চিকিৎসা চালিয়ে যাবেন । ম্যালেরিয়ার জ্বর আসবার একটা নির্দিষ্ট সময় আছে- সেই সময় অনুসারে এই লেবুর চিকিৎসা করবেন । এতে বমি হওয়া ও জ্বর আসা আস্তে আস্তে বন্ধ হবে ।

ম্যালেরিয়া হলে অনেক সময় মুখে স্বাদ থাকে না, মুখ তেতো হয়ে যায় এবং রোগী প্রায় উপোস করেই থাকে । পাকস্তলীতে টক্সিক অ্যাসিড জমে বমি হয় । সে রকম অবস্তায় পাকা পেঁপে যতটা রোগী খেতে পারবে দিনে তিন চারবার খেতে দিতে হবে, এর সঙ্গে যদি দুধও খেতে পারে তাহলে আরও ভাল হয় । তিন চার দিন ধরে পর পর রোগীকে এইভাবে পাকা পেঁপে ও দুধ খাওয়ালে ম্যালেরিয়া সেরে যেতে পারে ।

গুঁড়ো কালো গোলমরিচ, লবণ ও শুকনো খোলায় সেঁকে নেওয়া ফিটকারি প্রতিটি এক গ্রাম করে নিয়ে একটা লেবু কেটে আধখানা করে তার ওপর ছড়িয়ে দিন । এই লেবুর টুকরো রোগীকে আধ ঘণ্টা অন্তর চুষতে দিন । ম্যালেরিয়া শ্রেণীর সব জ্বরই এতে কমে ।

জ্বরে ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া

বেশি জ্বর হলে অনেক সময় খুব বেশি তেষ্টা পায় এবং অনবরত ঠোঁট সুকিয়ে যেতে থাকে । পাতিলেবুর রসে সমপরিমাণ গ্লিসারিন মিশিয়ে নিয়ে ঠোঁটে মাঝে মাঝে লাগালে সঙ্গে সঙ্গে আরাম পাওয়া যাবে ।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Simple 10 Scenery Drawing Practice for Beginners step by step

Make Money Online: Unlocking Digital Opportunities