জেনে নিন মানবদেহের তথ্য এবং বিভিন্ন অঙ্গসমূহ | Introduction to the Human Body
মানবদেহ
মানবদেহ হচ্ছে বিচিত্র ও রহস্যময়। বিজ্ঞানীরা আজ পর্যন্ত মানবদেহের সম্পূর্ণ রহস্য বের করতে পারেনি। মানবদেহ সম্পর্কে এখনও রয়ে গেছে নেক, অজানা রহস্য। হের মূল নিয়ন্ত্রক। মস্তিষ্কের স্থাপিত, যকৃত, পাকস্থলি, ও অস্থির।
মানবদেহে রয়েছে ২০৬ খানা হাড় ও পাঁচ শতাধিক মাংশপেশী। রয়েছে শিরা, উপশিরা ও ধমনী। মস্তিষ্ক হচ্ছে মানন সাথে যোগসূত্র রয়েছে মেরুদণ্ড, ফুসফুস, কিডনি, পিত্তথলি, মুত্রাশয়, মলনালী প্রভৃতির পেন হজম বা পরিপাকের জন্যে ক্ষুদ্রান্ত ও বৃহদান্ত বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। হৃদপিণ্ড রক্ত সঞ্চালন ও ফুসফুসে শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রেখে দেহকে সচল রাখে।
মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এক একটি বিশেষ কাজে নিয়োজিত । সবগুলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একজন মানুষ সুস্থ থাকে। মানব বা মানবী দেহ একটি ব্যাপক ব্যাপার। এই আলোচনা করতে গেলে দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। আমরা এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যাচ্ছি না। তা যাবার খুব একটা দরকারও নেই। ব্যায়াম যেহেতু মানবদেহ নিয়ে সে জন্যে মানব দেহের কতিপয় অংগ-প্রতঙ্গ নিয়ে খুব ছোট আলোচনা করা
মানবদেহের এস্থিগুলোর নাম :
* পিনিয়েল বডি
* পিটুইটারী আছি (হাইপোকিসিস),
* থাইরয়েড, ডি প্যারাথাইরয়েড,
* থাইমাস গ্রন্থি
*অ্যাড্রিনাল,
*প্যাংক্ৰিয়াস (অগ্ন্যাশয়)
*যৌন গ্রন্থি, আই-পুরুষ যৌন গ্রন্থি,
*মূত্রগ্রন্থি (কিডনি) ।
এই সমস্ত গ্রন্থি থেকে বিভিন্ন ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়। কতিপয় গ্রন্থি জন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কার্যকরী থকে। আবার কতিপর এহি জন্মের পর কার্যকারিতা হারায় বা হ্রাস পায়। যে সব গ্রন্থির রস নিগ্রোবী নল থাকে তাদেরকে এক্লোজিন গ্লাভস (বহিঃক্ষরা গ্রন্থি) বলে। যে সব গ্রন্থির রস নিঃস্রাবী নল থাকে না তাদেরকে ডাইলেস অব এনডোরিন (অরো গ্রন্থি) বলে। অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে হরমোন প্রতিটি গ্রস্থি আলাদা আলাদা কাজ করে। কোনো কোনো গ্রন্থি খাদ্য পরিপাক করে, কোনো কোনো গ্রন্থি দেহের রক্ত চলাচল ঠিক রেখে উষ্ণতা বজায় রাখে। কোনো গ্রন্থি দেহের গঠন বৃদ্ধি করে, কোনো গ্রন্থি যৌন ব্যাপারে কাজ করে। এভাবে প্রতিটি এন্থি মানবদেহে কোনো না কোনো কাজ করে শরীরকে সচল রাখে। দেহের কোনো এন্থি অচল হয়ে পড়লেই অসুস্থতা দেখাঅ
মস্তিষ্ক : The Brain
গোটা মস্তিষ্কটাকে ৪টি অংশে বিভক্ত করা যেতে পারে।
(ক) গুরু মস্তিষ্ক
(খ) মধ্য মস্তিষ্ক
(গ) লঘু মস্তিষ্ক
(খ) সুমুদ্রাশীর্ষক।
*মস্তিষ্কের নিচের অংশ সুহুম্নাশীর্ষক থেকে ১২ জোড়া স্নায়ু বের হয়ে সুষুম্নাকাণ্ডের সাথে মিলিত হয়েছে।
*গুরু মস্তিষ্ক হচ্ছে মগজের প্রধান অংশ। গুরু মস্তিষ্ক বিদ্যা, বুদ্ধি, চিন্তাশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, ঘ্রাণশক্তি, শ্রবণশক্তি নিয়ন্ত্রণ করে। গুরু মস্তিষ্কে রয়েছে একাধিক ছোট ছোট পিণ্ড। মস্তিষ্কে যত বেশি পিও থাকে তা তত বেশি শক্তিশালী হয়।
*গুরু মস্তিষ্কের নিচে রয়েছে থালামাস ও অবস্থালামাস। এই স্নায়ুর দ্বারা আমরা ঠাণ্ডা-গরম, দুঃখ-বেদনা, লজ্জা-শরম, রাগ-অনুরাগ, ক্রোধ-উত্তেজনা, যৌন উত্তেজনা অনুভব করি।
*মধ্য মস্তিষ্কে ৪টি পিও থাকে। এই মস্তিষ্কের কাজ হচ্ছে দেহের যাবতীয় পেশী পরিচালনা করা।মধ্য মস্তিষ্কের নিচে রয়েছে মস্তিষ্ক যোজক। এর কাজ হচ্ছে, মুখ ও গলার পেশী নিয়ন্ত্রণ করা।
*এছাড়া লঘু মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাশীর্ষক এর মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে এই যোজক। লঘু মস্তিষ্ক দেহের পেশীর কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করে। সুষুম্নাশীর্ষক হৃদস্পন্দন, শ্বাস ক্রিয়া, লালা নিঃসরণ, ধমনী সংকোচন প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করে।
ফুসফুস :Lungs
ফুসফুসের অবস্থান :
দেহের মধ্যে বুকের পাজরের নিচে ফুসফুস অবস্থিত। একটি পেশীযুক্ত পর্দা দ্বারা দেহ গহার দুই ভাগে বিভক্ত। এটিকে ডায়াফ্রাম বলে। ডায়াফ্রামের উপরের অংশ রক্ষার, নিচের অংশ উদর গহ্বর।
বায়ু কোষ দ্বারা ফুসফুস গঠিত। ফুসফুস দুটি ভাগে বিভক্ত।
যখন আমরা নাক দিয়ে বাতাস নেই তখন ফুসফুস ফুটবলের রাডারে মতো ফুলে ওঠে, আবার যখন শ্বাস ত্যাগ করি তখন সংকুচিত হয়ে পড়ে। সব সময় নাক দিয়ে দম নেয়া বা ছাড়া উচিত।
ফুসফুসের সাথে হৃৎপিণ্ডের যোগ রয়েছে। অৎপিণ্ডের সৃষ্টিত রক্ত অ কার্বন ডাই-অক্সাইড পূর্ণ রক্তনালী দিয়ে ফুসফুসের ভেতরে অসংখ্য চালক শিরায় চলে আসে। এখানে রক্ত ফুসফুসের ভেতরের বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে। ফুসফুস রক্ত থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোধন করে এবং অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা পূর্ণ করে। শ্বাসতন্ত্র, বা ফুসফুস দুর্বল হয়ে পড়লে নিচের রোগগুলোতে আক্রান্ত হতে পারেন ।
(ক) নিউমোনিয়া
(গ) ফুসফুসের ক্যান্সার
(খ) ব্রঙ্কাইটিস
(ঙ) শ্বাস কষ্ট বা এ্যাজমা
(ছ) পুরিসি প্রভৃতি।
সুতরাং একথা বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয় যে ফুসফুস আমাদের দেহের একটি অতি প্রয়োজনীয় অংশ। একে সুস্থসবল রাখা একান্ত অপরিহার্য। ফুসফু সুস্থ রাখতে ধূমপান বর্জন একান্ত প্রয়োজন ।
পেশী সমূহ : Muscles
(ক) ঐচ্ছিক পেশী: যে পেশীগুলোকে ব্যক্তির ইচ্ছেমত সংকুচিত বা প্রসারিত করা যায় তাকে বলা হয় ঐচ্ছিক পেশী
(খ) স্বাধীন পেশী : যে পেশীগুলো ব্যক্তির ইচ্ছেমতো কাজ করে না বরং নিজের ইচ্ছেমতো স্বাধীনভাবে কাজ করে তাকে বলা হয় স্বাধীন পেশী। যেমন : হৃৎপিণ্ড, খাদ্য নালী, পাকস্থলীর পেশী, ক্ষুদ্রাস্ত্র ও বৃহদান্ত্রের পেশী প্রকৃতি। এ পেশী সহজে সংকুচিত বা প্রসারিত হতে পারে। যে সব পেশী হাড়ের সাথে যুক্ত তাকে বলে ডোরাকাটা পেশী। এসব পেশী সহজে উত্তেজিত ও প্রশমিত হয়।
পেশীর প্রধান কাজসমূহ
পেশী সাধারণত কতকগুলো স্তর সমষ্টি। লক্ষ লক্ষ কোষ মিলে মাংসপেশীর সৃষ্টি করে। অথচ মসৃণ পেশীর তন্তুতে থাকে কেবল একটি কোষ অন্যান্য পেশীতে একাধিক কোষ থাকে।
পেশীর প্রধান কাজ হচ্ছে দেহে গতির সৃষ্টি করা। ডোরাকাটা পেশীগুলো সাদা ফিতের মতো হাড়ের সাথে যুক্ত থাকে। একে রগও বলা হয়। স্নায়ুতন্ত্রের নির্দেশমতো পেশী উত্তেজিত ও প্রশমিত হয়। এর ফলে আমরা চলাফেরা করতে পারি। এ ছাড়াও পেশী দেহে তাপমাত্রার সৃষ্টি করে থাকে। মানুষের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। পেশীসমূহ এই তাপমাত্রা সৃষ্টি করে।
শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে পেশীর ভূমিকা অত্যধিক। আর তাই পেশীকে সুস্থ ও সবল রাখার জন্য ব্যায়াম করা দরকার। তাতে পেশী সতেজ থাকে ও শরীর সুস্থ রাখে।
স্নায়ুতন্ত্র : Nervous System
স্নায়ুতন্ত্রের কাজ হচ্ছে, দেহে অনুভূতি সৃষ্টি করা। স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে আমরা ব্যথা-বেদনা-স্বাদ-মণ, ঠাণ্ডা-গরম, ভালো-মন্দ প্রভৃতি বুঝতে পারি। মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ড হচ্ছে স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান কার্যালয়। মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ড থেকে অসংখ্য স্নায়ুনালী শরীরের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় জালের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। স্নায়ুর কাজ হচ্ছে দুটি। অর্থাৎ দুই প্রকার স্নায়ু রয়েছে।
(১) কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র বা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম
(২) স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র বা অটোমেটিক নার্ভাস সিস্টেম।
মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ড নিয়ে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র গঠিত এবং সুষুম্নাশীর্ষক, লঘু মস্তিষ্ক, মধ্য যোজক, মধ্য মস্তিষ্ক থ্যালামাস ও গুরুমস্তিষ্ক নিয়ে স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র গঠিত। এ ছাড়া সমবেদী ও পরা সমবেদী স্নায়ু নিয়ে স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র গঠিত।
এই সমস্ত স্নায়ুমণ্ডলী কৌশলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদের দেহ-মনের গতি, প্রগতি, অনুভূতি, কার্য ও চেষ্টাকে নিয়ন্ত্রণ করে। স্নায়ুতন্ত্রকে দেহের শাসনকর্তা বলা যায়
সুষুম্নাকাণ্ড থেকে দেহের বিভিন্ন অংশে ৩১ জোড়া স্পাইনাল নার্ভ দেহের বিভিন্ন অঙ্গের (মস্তিস্ক ছাড়া) সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে থাকে। যেমন-
(১) ৮ জোড়া জীবা অঞ্চলে,
(২) ১২ জোড়া বক্ষ অঞ্চলে,
(৩) ৫ জোড়া কটি অঞ্চলে,
(৪) ৫ জোড়া ত্রিকাস্থি অঞ্চলে,
(৫) ১ জোড়া অনুত্রিকাস্থি অঞ্চলে।
মস্তিষ্কে থাকে ১২ জোড়া স্নায়ু। একে করোটি স্নায়ু বা ক্রেনিয়াল নার্ভ বলে।
যেমন-
(১) ঘ্রাণ স্নায়ু
(২) চক্ষু স্নায়ু
(৩) চক্ষু সঞ্চালন
(৪) চক্ষু পেশী স্নায়ু
(৫) ট্রাইজেমিনাল
(৬) সুষুম্নাশীর্ষক স্নায়ু
(৭) মুখের স্নায়ু
(৮) শ্রবণ স্নায়ু
(৯)স্বাদ ও স্পর্শ স্নায়ু
(১০) ভ্রাম্যমাণ স্নায়ু
(১১) সুসমা সহায়ক স্নায়ু
(১২) জিহ্বা সঞ্চালন স্নায়ু
মস্তিষ্ক স্নায়ুমণ্ডলীর কেন্দ্রস্থল। মস্তিষ্ক থেকে যে আদেশ প্রেরিত হয় তা সাথে সাথে মাংসপেশী ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে চলে যায়। স্নায়ুগুলো মূল মেরুদণ্ডে অবস্থিত বলে মানুষের যৌবন ও জীবনীশক্তি মেরুদণ্ডের সবলতার ওপর নির্ভর করে। মেরুদণ্ডে ঠিকমতো রক্ত চলাচল করতে না পারলে স্নায়ুগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে শরীরে রোগ সৃষ্টি হয়। মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক গতি হয় প্রকার। অর্থাৎ হয় রকমের (ব্যায়ামের সাহায্যে) মেরুদণ্ড বাঁকানো যায়।
ব্যায়াম নিয়মিত করলে মেরুদণ্ড ও স্নায়ুমণ্ডলী সুস্থ ও সবল থাকে। শরীরকে সুস্থ ও সবল এবং রোগমুক্ত রাখার জন্য নিয়মিত মেরুদণ্ড ও স্নায়ুর ব্যারাম করা দরকার। সুস্থ মেরুদণ্ড ও স্নায়ুতন্ত্র মানে সুস্থ জীবন ।
হৃৎপিণ্ড : Heart
হৃৎপিণ্ড অনেকটা আতাফলের মতো দেখতে একটা মাংসপিণ্ড। এ মাংশপেশী খুবই শক্ত এবং সংকোচন ও প্রসারণ ক্ষমতাও অনেক বেশি। এটিকে একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র বলা যেতে পারে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের হৃৎপিণ্ডের আকার হয় ৫ ইঞ্চি লম্বা ও ২ ইঞ্চি চওড়া। বুকের ভেতরে পাজরের ঠিক বা দিকে একপ্রকার তরল পদার্থের অবরণে সুরক্ষিতভাবে হৃৎপিণ্ডের ৪টি অংশ। উপরের দুটি অংশকে ডান অলিন্দ ও বাম অলিন্দ এবং নিচের দুটিকে ডান নিলয় ও ৰাম নিলয় বলে। অলিন্দ ও নিলয়ের মধ্যে একটি করে কপাট রয়েছে। এই কপটি খুলে প্রয়োজনীয় সময়ে রক্ত অলিন্দ থেকে নিলয়ে যেতে পারে। কিন্তু নিলয় থেকে অলিন্দে আসতে পারে না।
ডান অলিন্দে দু'টো মহাশিরা এসে যুক্ত হয়েছে। এই শিরার মধ্যে দিয়ে দূষিত রক্ত ডান অলিন্দে চলে আসে। এখান থেকে চলে যায় ডান নিলয়ে। ডান নিলয় থেকে দূষিত রক্ত চলে যায় দুই ফুসফুসে। ফুসফুস যে দূষিত রক্তকে শোধন করে অক্সিজেন সমৃদ্ধ করে আবার হৃৎপিণ্ডের অলিন্দে চলে আসে। অলিন্দ থেকে যায় বা নিয়ে। বা নিলয় সেই রক্ত ছড়িয়ে দেয় সারা শরীরে। হৃদস্পন্দন হচ্ছে হৃৎপিণ্ডের কপাট খোলা-বন্ধ হবার মৃদু শব্দ।
শরীর সুস্থ রাখতে হলে হৃৎপিণ্ডকেও সুস্থ রাখা দরকার। ব্যায়াম করে হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ ও সতেজ এবং কর্মক্ষম রাখা যায়। হৃৎপিণ্ড সতেজ না থাকলে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়।
রক্ত : Blood
(১) রক্তরস বা প্লাজমা,
(২) রক্ত কণিকা।
রক্তরস মূলত রক্তের অন্যতম প্রধান উপাদান। রক্ত থেকে রক্তকণিকা অপসারণ করলে যে হালকা হলুদ বর্ণের মৃদু ক্ষার জাতীয় তরল পদার্থ থাকে তাকে রক্তরস বা প্লাজমা বলে। রক্তের প্রায় ৬০% হচ্ছে রক্তরস বা প্লাজমা। এতে প্রায় পানি জমা থাকে। বাকি অংশে থাকে প্রবীভূত আমিষ, কিছু জৈব- যৌগ ও অজৈব লবণ। রক্ত রসে যে উপাদানগুলো থাকে, তা হলো:
(১) আমিষ (২) গ্লুকোজ (৩) খনিজ লবণ (৪) ভিটামিন
(৫) চর্বি কণা (৬) হরমোন (৭) বর্জ্য পদার্থ (৮) এন্টিবডি। রক্ত কণিকা
রক্তে তিন প্রকার কণিকা থাকে। যেমন:
(ক) লোহিত কণিকা
(গ) শ্বেত কণিকা
(গ) অণুচক্রিকা।
(ক) লোহিত কণিকা: লোহিত কণিকার পরিমাণ রক্তে বেশি। এতে রয়েছে হিমোগ্লোবিন। এ কারণে লোহিত কণিকার রং লাল। হিমোগ্লোবিন, অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবহনে সাহায্য করে।
(খ) শ্বেত কণিকা : শ্বেত কণিকায় নিউক্লিয়াস থাকে। তবে রক্তে এ কণিকার পরিমাণ কম। শ্বেত কণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস বা কোষ ভক্ষণ প্রক্রিয়ায় রক্তের জীবাণু নষ্ট করে রক্তকে শোধন করে। রোগজীবাণু প্রতিরোধকারী এন্টিবডি তৈরি করা ও পুঁজ আকারে ফোড়ার মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়া। প্রতি ঘন মিলিলিটার রক্তে ৫৫০০ থেকে ৭০০০ শ্বেত কণিকা থাকে। তবে তা বর্ণহীন।
(গ) অনুচক্রিকা : এটি আকারে অতি ক্ষুদ্র। এই কণিকা অনেকগুলো দল বেঁধে একসাথে থাকে। প্লীহা ও অস্থির মজ্জায় এর জন্ম হয়। এই কণিকার প্রধান কাজ হচ্ছে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করা।
রক্তের কাজ
আমাদের দেহে রক্ত অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদার্থ। রক্তের কাজ নিয়ে উপরে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে। রক্ত যে সমস্ত নালী, ধমনী, শিরা ও উপশিরা হচ্ছে : দিয়ে চলাচল করে সেগুলোকে বলা হয় রক্ত সংবহনতন্ত্র রক্ত সংবহনের কাজ
(১) অস্ত্র ও যকৃতের খাদ্যদ্রব্যের সারাংশ দেহের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেয়া।
(২) ফুসফুস থেকে অক্সিজেন সারা শরীরে পৌঁছে দেয়া ও দেহ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড ফুসফুসে পৌঁছে দেয়া।
(৩) নাইট্রোজেন গঠিত ইউরিক এসিড, ইউরিয়া প্রভৃতি বৃষ্ণে, কিডনিতে পৌঁছে দেয়া।
(৪) দেহের প্রয়োজন অনুযায়ী দেহের বিভিন্ন স্থানে হরমোন পৌঁছে দেয়া বা সরবরাহ করা।
(৫) দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় রাখতে সহযোগিতা করা। দেহে তাপের সমতা রক্ষা করা।
(৬) শরীরকে রোগ-জীবাণুমুক্ত রাখা।
(৭) রক্ত দেহের প্রতিটি কোষে পানির সমতা রক্ষা করে।
(৮) দেহের কোনো অংশ কেটে গেলে অনুচক্রিকা তা সহজে জমাট বাঁধতে
সাহায্য করে।
(৯) প্রয়োজনীয় মুহূর্তে কোনো অঙ্গের সঞ্চিত খাদ্য রক্তবাহিত হয়ে অন্য অঙ্গে পৌঁছায়।
(১০) রক্ত দেহের সুগঠিত পরিবেশ সৃষ্টি করে।
(১১) দেহের রেচন পদার্থ সংগ্রহ করে বিভিন্ন তন্ত্রের মাধ্যমে তা শরীর
থেকে বের করা।
সুতরাং রক্ত সংবহনতন্ত্রের ভূমিকা যে কম নয় তা বুঝতে মোটেও কষ্ট হবার কথা নয়। শরীর সুস্থ রাখতে রক্ত সংবহনতন্ত্রগুলোকেও সুস্থ রাখা দরকার।
খাদ্য পাচনতন্ত্র : Food Digestive System
গ্রহণ করা খাদ্যবস্তু পৌস্টিকনালীর যান্ত্রিক কাজের সাহায্যে মুখ গহ্বর থেকে পৌস্টিকনালীর বিভিন্ন অংশের ভেতর দিয়ে মলদ্বার ও মূত্রথলীতে পৌঁছায়। পৌস্টিক নালী থেকে মলদ্বারে যে সমস্ত নালী দিয়ে পৌঁছা
(১) মুখ গহ্বর
(২) গলবিল
(৩) খাদ্যনালি
(৪) পাকস্থলী
(৫) ক্ষুদ্রান্ত
(৬) বৃহদান্ত্র
(৭) মলাশয়
(৮) মলনালী ও মূত্রথলি
(৯) মলদ্বার ও মূত্রনালি
খাদ্যবস্তু প্রথমে মুখ গহ্বরে প্রবেশ করে। জিহ্বা তা গ্রহণ করে এবং দাঁত ঘরা চর্বিত হয়ে গলবিলে যায়। গলবিলে আলজিহ্বা নামে যে ঢাকনাটি আছে। তার সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শ্বাসনালী দিয়ে বায়ু ও খাদ্য অন্ননালীতে পৌঁছায়। গলবিল ও পাকস্থলীর যোগাযোগকারী নালীর নাম অন্ননালী। অনুন খাদ্যবস্তুকে দ্রুত পাকস্থলীতে পৌঁছে দেয়। পাকস্থলী খাদ্যবস্তুকে পরিপাক করে। পাকস্থলীর পেশী সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে খাদ্যবস্তু পাকস্থলী বা পৌস্টিক নালীর যান্ত্রিক কাজের দ্বারা আংশিক জীর্ণ পারুমও ক্ষুদ্রান্ত্রের গ্রহগীতে পৌঁছায়।
পাকস্থলরি পরের অংশ ক্ষুদ্রান্ত। এটি ২০ ফুট লম্বা। প্রকৃতপক্ষে বাদ্য সঙ্গের পরিপাক ক্রিয়া আরম্ভ হয় ক্ষুদ্রান্ত্রে।
ভিলাসের সাহায্যে রক্তে গিয়ে রক্ত সংবহনের মাধ্যমে প্রতিটি কোষে পৌঁছার এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের ক্রম সংকোচনের কারণে অশোষিত অসারাংশ বৃহদন্ত্রে পৌঁছায়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন